fbpx
দেশবাংলা

কুশিয়ারার গ্রাসে ঘরহারাদের সংখ্যা বাড়ছেই

||মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ||

নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদী যেন এক মূর্তিমান অভিশাপ। সর্বনাশা এই নদী কেড়ে নিচ্ছে ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ফসলি জমি। কুশিয়ারার এই ভাঙন চলছে যুগের পর যুগ ধরে। সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছে শত শত পরিবার। যাদের একসময় অনেক কিছু ছিল সব হারিয়ে তারা আজ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে গৃহহীনদের সংখ্যা।

কার্যত নদী ভাঙন থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগই নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এবার ভাঙনের কবলে পড়েছে ওই এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটি বাড়ি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে কুশিয়ারার করাল গ্রাস অপর দিকে ভাঙন। এ দুয়ে মিলে এলাকাবাসী কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলেই নতুন করে ভাঙনের সৃষ্টি হয় কুশিয়ারার পাড়ে। ফলে বিলীন হয়ে যায় নতুন নতুন বাড়ী ও গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা।

গত কয়েকদিন ধরে ভাঙনের কবলে পড়েছে প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ফুফুর বাড়ি। দীঘলবাক গ্রামের প্রবাসী আবুল হাসেম ছুপির প্রায় ৩শ’ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ওই বাড়িতে অনেক মন্ত্রী এমপিসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের লোকজন গিয়েছেন। কিন্তু ওই বাড়িটি আজ পড়েছে কুশিয়ারার ভাঙনের কবলে। নদী ভাঙন যেন গরীব ও ধনীকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। আপদে বিপদে ধনীরা গরীবদের সাহায্য করে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কে কার সাহায্য করে। কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে দীঘলবাক এলাকার বসতবাড়ি, বনসম্পদ, চাষাবাদ যোগ্য ভূমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার এমনকি উপাসনালয়ও বিলীন হয়ে গেছে।

Nabiganj Rever PKG 1

তারপরও কুশিয়ারা নদীর ধ্বংসলীলা রোধ কল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। নদী সভ্যতার প্রতীক হলেও কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকাবাসীর জন্য ধ্বংস ও ভয়ানক অভিশাপের প্রতীকরূপে বিরাজমান। তীরবর্তী এলাকাগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে কুশিয়ারা নদীর নাব্যতা হ্রাস, ঘরবাড়ি, বনসম্পদ, চাষাবাদ যোগ্য ভূমি ও বসতবাড়ি ভাঙ্গন সমস্যা, বন্যার তাণ্ডবলীলায় ফসলহানি, নদীতে চর জাগা, নৌযান চলাচল বিপর্যস্ত, মৎস্য সম্পদের হ্রাস কুশিয়ারার তীর সংরক্ষণে উদাসীনতা ও স্থানীয় জীবন যাত্রা সেই ব্রিটিশ শাসন থেকে অব্যাহত আছে।

কুশিয়ারা নদীর হিংস্র থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত ও গৃহহীন হয়েছেন বারবার উত্তর নবীগঞ্জের দীঘলবাক, আহমদপুর, কুমারকাদা, গালিমপুর, মাধবপুর, ফাদুল্লা, মথুরাপুর, জগন্নাথপুর উপজেলার আটঘর, নোয়াগাঁও, রানীগঞ্জ, বানিয়াচং উপজেলার এক বিরাট জনগোষ্ঠী। কুশিয়ারা নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে ঐতিহ্যবাহী দীঘলবাক এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে সরকারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করে ইতিপূর্বে সমাজকর্মী, লেখক শিক্ষানুরাগী ও সাংবাদিক  আবুল কালাম আজাদ ছোটন এর নেতৃত্বে বিশাল মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছিল দীঘলবাকবাসী।

এ ব্যাপারে আবুল কালাম আজাদ ছোটন বলেন, দীঘলবাক একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম, ইউনিয়ন পরিষদের নামও এই গ্রামের নামে নামকরণ করা হয়েছিল, কিন্তু এই গ্রাম আজ বিলীন হওয়ার পথে। দ্রুত নদী ভাঙনের ফলে বেকারত্ব, অশিক্ষা, দরিদ্রতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।  নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। তিনি গ্রহণের বলেন স্থানীয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে বারবার আবেদন করেও কোন ফল পাচ্ছেন না। অচিরেই নদী ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা না নিলে ঐতিহ্যবাহী দীঘলবাক গ্রাম তথা ইউনিয়ন এক সময় বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকায় আছেন।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ-বিন-হাসান বলেন, কুশিয়ারা নদীর ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যে একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু হবে।

Nabiganj Rever PKG 2

জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনের তীব্রতা রোধ কল্পে সামান্যতম হলেও সরকারী নানা পদক্ষেপ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও সাহায্য সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। কিন্তু নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের জনসাধারণকে কোন সরকারী সাহায্য, পুনর্বাসন করা হয়নি, এমনকি যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ভাঙনের তীব্রতা রোধ কল্পে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যার ফলে উল্লেখিত জনপদের বিভিন্ন পেশার লোকজন চাষাবাদ যোগ্য জমি, বাসগৃহ, বনসম্পদ বারবার হারানোর বেদনায় এলাকার বাতাসে দুঃখ ও হতাশার করুণ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে দীঘলবাক বাজার, হাই স্কুলসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান একাধিকবার নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। নদী ভাঙনে অনেকের বাড়ী-ঘর হারিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে জীবন করে আসছে। এক দিকে নদী ভাঙন অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টির কারনে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী মানুষের অকাল বন্যার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। এটা যেন তাদের জীবনে আষ্ঠেপৃষ্টে বাঁধা। এলাকাবাসী করাল কুশিয়ারা নদী ভাঙন থেকে মুক্তি চায়। তারা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বাংলাটিভি/এবি

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button