fbpx
আইন - শৃঙ্খলাজনদুর্ভোগবাংলাদেশ

রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে অবরোধ

তিনটি পার্বত্য জেলায় সংঘাত, সহিংসতা ও নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে যে অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে, তাতে সেখানকার জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

যদিও ঘটনার শুরু হয়েছিলো খাগড়াছড়ির দীঘিনালাতে। কিন্তু পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের ঘটনার রেষ ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানেও।

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে চার জন নিহত, অগ্নিসংযোগ করে দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে গতকাল ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দেওয়া হয়।

এই কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন নামের সংগঠন। এ ছাড়া ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টও (ইউপিডিএফ) অবরোধে সমর্থন জানায়।

স্থানীয় সাংবাদিকরা  জানিয়েছেন, জেলাগুলোতে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে সংঘাতপ্রবণ এলাকাতে তারা টহল জোরদার করেছে।

প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না এখন। বের হলেও তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

আর যেহেতু অবরোধ চলছে, তাই বর্তমানে সেখানে সকল প্রকার পরিবহন বন্ধ। তিন জেলায় দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলছে না। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

কোন জেলায় কেমন পরিস্থিতি

ঘোষণা অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে তিন জেলাতেই অবরোধ চলছে।

তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অবরোধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে। বান্দরবানের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।

রাঙামাটিতে ওই অবরোধের পাশাপাশি এখনও ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে, চলছে পরিবহন ধর্মঘটও।

মূলত, গত ১৯শে সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়।

স্থানীয় সাংবাদিক সমির মল্লিক জানিয়েছেন, ওই রাতে খাগড়াছড়িতে ১০২টি দোকানে আগুন দেয়া হয়।

ওই ঘটনার প্রতিবাদেই গতকাল দুপুরে রাঙ্গামাটির স্টেডিয়াম এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে পাহাড়িরা। এতে অংশ নেয় কয়েক হাজার মানুষ।

মিছিলটি বনরুপা বাজারে গেলে গুজব ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ।

রাঙ্গামাটির স্থানীয় সাংবাদিক কায়সার আহমেদ বলেন, বাজারে মিছিল নিয়ে জড়ো হওয়া পাহাড়িরা মসজিদে হামলা করেছে, এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়লে বাঙ্গালীরা তাদেরকে আক্রমণ করে।

ওই ঘটনায় দু’পক্ষের ৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত ও একজন চাকমা নিহত হয়েছেন।

কায়সার আহমেদ জানান, হাসপাতালে এখন ৩০ থেকে ৩৫ জন আহত ভর্তি হয়েছেন।

রাঙ্গামাটির যাত্রী ও মালামাল পরিবহনকারী কমিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ঘোষণা করেছে। কারণ গতকাল ওদের গাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছিলো, বলছিলেন তিনি।

“সবমিলিয়ে পরিস্থিতি থমথমে। দোকানপাট বন্ধ। কেউ বের হচ্ছে না। বের হলে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে।”

এদিকে, সংঘর্ষে নিহত চারজনের তিনজনই খাগড়াছড়ির। সেখানকার পরিবেশও এখন গুমোট।

মি. মল্লিক জানান, যারা মারা গেছে তাদের একজনের অন্তেষ্ট্যিক্রিয়া হয়েছে আজ। এই ঘটনার প্রতিবাদে সেখানে শোকসভা হয়েছে এবং ছাত্রসমাজ বিচার দাবি করেছে।

খাগড়াছড়িতেও যেহেতু ৭২ ঘণ্টার অবরোধ চলছে, তাই “জেলার নয় উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। বিভিন্ন পণ্য চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসা হয়, সেগুলো আসছে না।”

যারা আহত হয়েছেন, তাদের নয়জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি বলে জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া, বান্দরবানের স্থানীয় সাংবাদিক বাসু দাশের সাথেও কথা হয় ।

তিনি জানিয়েছেন, বান্দরবানে অবরোধের ডাক দিলেও সেখানকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।

“এখানে কোনও সংঘাত-সহিংসতা হয়নি। তবে সেনাবাহিনী নিয়মিত টহলে আছে। আর আজ এখানে কোনও কর্মসূচিও পালন করা হয়নি। আগের দিন রাতে মিছিল বের হয়েছিলো শুধু,” তিনি বলছিলেন।

সরকার ও প্রতিবাদকারীদের ভাষ্য

উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ সরকারের আরো তিন জন রাঙ্গামাটি পরিদর্শনে গেছেন।

উচ্চপর্যায়ের এই প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন– পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হাসান আরিফ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ।

আজ শনিবার তারা রাঙ্গামাটির রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর একই উদ্দেশ্যে খাগড়াছড়ি যান তিন উপদেষ্টা।

রাঙ্গামাটি পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা আইনশৃঙ্খলার অবনতির করবে তাদেরকে কোনও অবস্থাতে ছাড় দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে আবার চেষ্টা করলে তাদের হাত আমরা ভেঙ্গে দেব।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

তবে ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে যে ঘটনা ঘটে গেছে, তা তদন্তের জন্য সবার সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হবে বলেও তিনি জানান।

এদিকে রাঙামাটিতে বৈঠক শেষে উপদেষ্টা হাসান আরিফ সাংবাদিকদের বলেছেন, “রাঙামাটিতে আসার সময় দেয়ালে দেয়ালে যে গ্রাফিতি দেখেছি, সে গ্রাফিতির যে বার্তা, সেটা পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখতে চাই।”

“আমরা সকলে সম্প্রীতি চাই। কিন্তু কেন জানিনা কোথাও একটা ছন্দপতন হচ্ছে। বাইরে থেকে যেন একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে আমাদের এই সম্প্রীতিকে নষ্ট করার জন্য,” বলেন হাসান আরিফ।

এদিকে, বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতার ব্যানারে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন একদল তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের একজন হলেন অংকন চাকমা।

তিনি বলেন পাঁচই অগাস্টের পরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শেখ হাসিনার শাসনামলের অনেক ব্যক্তিকে পরিবর্তন করা হলেও হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন পরিবর্তন আসেনি।

তাদের অভিযোগ, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর লোকজন বহাল তবিয়তে রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকারের কথা বলতে গেলেই বিচ্ছিন্নতাবাদি হিসেবে ট্যাগ দেবার চেষ্টা করা হয়।

“আমরা মনে করি, পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্যার সমাধান করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে একীভূত করতে হবে এবং রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে,” দাবি করেন অংকন চাকমা। বিবিসি

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button