fbpx
আন্তর্জাতিকমধ্যপ্রাচ্য

বিক্ষোভ-প্রতিবাদে উত্তাল ইসরাইল

ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা সিনবেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের প্রতিবাদে গত তিন দিন ধরে তুমুল বিক্ষোভ চলছে ইসরাইলজুড়ে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর তার ওপর থেকে আস্থা হারানোর কথা বলার এক সপ্তাহ পর শুক্রবার দেশটির আইনসভা সিনবেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইনসভা সর্বসম্মতিক্রমে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। যার ফলে ইসরাইলি নিরাপত্তা সংস্থার (ISA) পরিচালক রোনেন বার-এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে’।

বিবৃতি অনুযায়ী, রোনেন বার তার নতুন উত্তরসূরি নিযুক্ত হলেই অথবা আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে তার পদ থেকে বিদায় নেবেন।

রোনেন বারের প্রতিক্রিয়া

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত এক চিঠিতে রোনেন বার তার বরখাস্তকে নেতানিয়াহুর ‘ব্যক্তিগত স্বার্থের’ কারণে নেওয়া সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, ২০২৩ ‍সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা সম্পর্কিত তার সংস্থার তদন্তের ফলাফল নেতানিয়াহুকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।

বারের মতে, সিনবেতের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের ‘নিরব নীতির’ ফলে হামাস ব্যাপক সামরিক শক্তি অর্জন করতে পেরেছে। তিনি আরও বলেন, নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের কাতার থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও তিনি তদন্ত করছিলেন।

রোনেন বলেন, ‘এই মুহূর্তে নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানকে বরখাস্ত করাটা জনগণের জন্য একটা ভুল বার্তা। যা তদন্তের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে এবং ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে’।

নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিতর্ক

সিনবেত নেতানিয়াহুর শীর্ষ সহকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করছিল। যার মধ্যে গোপন নথি বিদেশি মিডিয়ায় ফাঁস করা এবং কাতার থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। কাতার দীর্ঘদিন ধরে হামাসকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

রোনেন বারের ২০২৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল। তাকে নিয়োগ করেছিল নেতানিয়াহুর পূর্ববর্তী সরকার। যে সরকার ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য নেতানিয়াহুকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে রেখেছিল।

রাজনৈতিক বিরোধিতা ও আইনি চ্যালেঞ্জ

এদিকে বারের বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসরাইলের বিরোধী দল ও নাগরিক সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে।

‘দ্য মুভমেন্ট ফর কোয়ালিটি গভর্নমেন্ট ইন ইসরাইল’ বলেছে, ‘এটি বেআইনি সিদ্ধান্ত, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রকৃত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে’।

বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদের কেন্দ্র-ডানপন্থি দল এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছে এবং বলেছে, ‘এটি স্বার্থের সংঘাতের সুস্পষ্ট উদাহরণ’।

সাবেক সিনবেত প্রধানের প্রতিক্রিয়া

শুক্রবার ইসরাইলের সাবেক সিনবেত প্রধান ইয়ারাম কোহেন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘রোনেন বারকে বরখাস্ত করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত’।

তিনি দাবি করেন, যখন তিনি ২০১১ সালে সিনবেত প্রধান ছিলেন, নেতানিয়াহু তাকে সরকারের শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ফোনে গোপনে আড়িপাতার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলা ও চলমান বিক্ষোভ

এদিকে নেতানিয়াহু বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে বিচারাধীন এবং সপ্তাহে দুইবার তাকে সাক্ষ্য দিতে হচ্ছে। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন এবং মোট ১৭ বছর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে তার বিরুদ্ধে শুক্রবারও চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমেছে। যারা একদিকে বার-এর বরখাস্তের বিরোধিতা করছে, অন্যদিকে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তেরও প্রতিবাদ করছে। গাজায় হামাসের হাতে এখনো ৫৯ জন ইসরাইলি জিম্মি আটক রয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ান

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button