
মরহুমের কন্যা সংগীতশিল্পী সামিরা আব্বাসী বাবার মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করে ফেসবুকে এক আবেগঘন পোস্টে লেখেন, “আমার সোনার চান পাখী… আর দেখা হবে না?”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতায় কয়েকদিন আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাসউদ্দিন আহমদের তৃতীয় পুত্র মুস্তাফা জামান আব্বাসী, জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর, ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে। কলকাতায় কেটেছে শৈশব ও কৈশোর, সেখানেই সংগীতের হাতে খড়ি। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ মুহম্মদ হোসেন খসরু ও ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁর কাছে তালিম নেন সংগীতে।
বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিতে ‘আমার ঠিকান’ ও ‘ভরা নদীর বাঁকে’ নামে দুটি সংগীতবিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
সংগীত ও সাহিত্য নিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০টিরও বেশি। এর মধ্যে রয়েছে: ‘আব্বাসউদ্দিন: মানুষ ও শিল্পী’, ‘জীবন নদীর উজানে’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’, ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি’ (১ ও ২ খণ্ড), ‘লালন যাত্রীর পশরা’, ‘রবীন্দ্রনাথ প্রেমের গান’, ‘সুফি কবিতা’, ‘মুহাম্মদের নাম’, ‘গালিবের হৃদয় ছুঁয়ে’ ইত্যাদি।
সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন ১৯৯৫ সালে একুশে পদক। এছাড়াও পেয়েছেন: নজরুল একাডেমি আজীবন সম্মাননা (২০১৩), শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, আব্বাসউদ্দিন গোল্ড মেডেল, লালন পুরস্কার, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক পুরস্কার, সিলেট মিউজিক পুরস্কার, মানিক মিয়া পুরস্কার।
স্ত্রী আসমা আব্বাসী ছিলেন শিক্ষক ও লেখক, তিনি ২০২৪ সালের ৫ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তাদের দুই কন্যা সামিরা আব্বাসী ও শারমিনী আব্বাসী সংগীত ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত।
পরিবার জানিয়েছে, শনিবার জোহরের নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলা সংগীত ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন হারালো এক নিষ্ঠাবান সাধককে—যার সৃষ্টি, গবেষণা ও সংগ্রহ অনাগত প্রজন্মের সম্পদ হয়ে থাকবে।