fbpx
অন্যান্যআইন-বিচার

ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুদকের কঠিন বিচার দাবি জাহালমের

তিন বছর পর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা ৩৩ মামলার নিরপরাধ আসামি জাহালম। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে তিনি কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ থেকে মুক্তি পান। এ সময় তাঁকে জড়িয়ে ধরে আনন্দের কান্নায় ভেঙে পড়েন ভাই শাহানূর মিয়া।

জাহালমকে দেখেই সাংবাদিকদের প্রথম প্রশ্ন ছিল, ‘জাহালম বলবেন, কেমন লাগছে আপনার? জাহালম বলেন, ‘এখন আমার অনেক ভালো লাগছে। আমি তিন বছর পর জেল থেকে বাইর হইছি, এখন আমার অনেক ভালো লাগছে।’ জাহালম বলেন, ‘আমি কোনো অপরাধ না কইরা আজকে তিন বছর দুদক আমারে আটকা রাখছে মামলা দিয়া, মিথ্যা মামলা দিয়া। আমি দুদকের কঠিন বিচার চাই। এখন আমার অনেক ভালো লাগছে। অনেক খুশি লাগছে। কেননা আমি জীবনে চিন্তাও করতে পারি নাই আমি জেল থেকে বাইর হইতে পারমু, এত মামলা, মিথ্যা মামলা। অনেক কষ্টে দিন কাটছে। কষ্ট কইরা মানুষের কাপড়টাপড় ধুইয়া, ওয়ার্ডে সেবা কইরা, কাজ-কাম কইরা চলছি, একটু ভালো খাইছি।’

বিনা দোষে তিন বছর কারাগারে আটকে রাখায় ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে জাহালম বলেন, ‘আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হইছি। আমি ক্ষতিপূরণ চাই রাষ্ট্রের কাছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।’ জাহালম বলেন, ‘জজ স্যাররে বলছিলাম যে আমি এই মামলার আসামি না। আমি আবু সালেক (প্রকৃত আসামি) না, আমি জাহালম। কিন্তু তিনি আমার কথা বিশ্বাস যায়নি (করেননি)। জজ সাহেব দেখছে যে, এই ছবি আর এই ছবি মিলছে, কয় আমি বলে সেই লোক। আর স্বাক্ষীরা তারাও বলে আমি সেই (আবু সালেক) লোক। কিন্তু আমি তো সেই সময় কোনো কিছু জানি না।’

আপনি কি তাদের বিরুদ্ধে বিচার চাইবেন জানতে চাইলে জাহালম বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে বিচার চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আমি আদালতরে (হাইকোর্ট) অনেক ধন্যবাদ জানাই। আর তাতে আমি অনেক খুশি হইছি।’ দুদককে সঠিক তদন্তের মামলার আসামি ধরার দাবি জানিয়ে জাহালম বলেন, ‘দুদক যেভাবে মিথ্যা মামলা দিয়া মানুষরে হয়রানি করতাছে, দুদক হইলো এক নম্বর জালিয়াত। সঠিক তদন্ত না কইরা যানি (যেন) লোক ধরে না তারা। সঠিক তদন্ত নিয়া তারপর লোকদের মামলার আসামি করুক।’

এ সময় তাঁর ভাই শাহানূর মিয়া বলেন, যাদের ভুলের কারণে তাঁর ভাই জেল খেটেছে তিনি তাদের বিচার ও ক্ষতিপূরণ চান। পরে একটি মাইক্রোবাসে উঠে দুই ভাই কারা এলাকা ত্যাগ করেন।

এর আগে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন এবং তাৎক্ষণিক মুক্তি দিতে উপকারামহাপরিদর্শককে (ডিআইজ প্রিজন্স) নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে জাহালমকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে রাখার ঘটনায় দুদকের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেন আদালত। আদালত বলেন, বিনা দোষে জাহালমকে কারাগারে রাখা আরেকটি জজ মিয়ার নাটকের মতো ঘটনা। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেন, এক নির্দোষ লোককে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা না। ঘটনার সঙ্গে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত থাকলে খুঁজে বের করতে হবে। হাইকোর্টের আদেশ শোনার পর জাহালমের ভাই বিকেল ৪টার দিকে কাশিমপুর কারাগারে ছুটে আসেন এবং কারাগারের ফটকে অপেক্ষা করতে থাকেন।

শাহানূর মিয়া তখন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ভাই আমার বুকে আসতেছে এটা বড় আনন্দ। আমার ভাই বিনা অপরাধে বিনা দোষে জেল খাটল। রাষ্ট্রের কাছে সঠিক বিচার চাই। যারা এটার তদন্ত করছে আইনের আওতায় এনে তাদের সঠিক বিচার হওয়া উচিত। যদি এটা প্রমাণ না করতে পারতাম, আমার ভাইয়ের ৪০০ বছর জেল হইয়া যাইত। দুদকের প্রসিকিউটর এবং দুদকের অফিসাররা বলছে, যদি আবু সালেককে না পাওয়া যেত তাহলে জাহালমের সর্বনিম্ন সাত বছর প্রতি মামলায়, আর সর্বোচ্চ ১২ বছর সাজা হতো। তার মানে আমি হিসাব করে দেখলাম, আমার ভাইয়ের ৩৯৬ বছর সাজা হতো। আমার ভাইরে আমি জীবনেও কাছে পেতাম না।’ এ জন্য তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানান।

বাংলাটিভি/প্রিন্স

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button