
মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী আর নেই।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে মৃত্যুবরণ করেন তিনি, ওসমান চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই নানা রোগে ভুগছিলেন। পরে গত ৩০ আগস্ট তাকে সিএমএইচে ভর্তি করানো হলে তার করোনা পজিটিভ আসে। এর তিন দিন পর আবার তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে যখন ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞ অপারেশন সার্চ লাইট শুরু হয়,সে সময় তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের চতুর্থ উইংয়ের কমান্ডার হিসেবে চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বে।
পরদিন সকালে তিনি কুষ্টিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছান এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করে একদল সৈনিককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হলে আবু ওসমান চৌধুরী এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে মন্ত্রিপরিষদকে গার্ড অব অনার দেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবু ওসমান চৌধুরীকে লেফটেনেন্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়, বঙ্গবন্ধু তাকে আর্মি সার্ভিস কোরের (এএসসি) পরিচালকের দায়িত্ব দেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সেনা অভ্যুত্থানের সময় একদল সেনসদস্য আবু ওসমান চৌধুরীকে হত্যার জন্য তার গুলশানের বাড়িতে হামলা করে। বাড়িতে না থাকায় তিনি সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন তার স্ত্রী নাজিয়া খানম।
পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন আবু ওসমান চৌধুরী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবু ওসমান চৌধুরীকে বিজেএমসির চেয়ারম্যান করা হয়। পরে তাকে চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে আবু ওসমান চৌধুরীকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাটিভি/শহীদ