দেশে অরাজকতা তৈরি করতে গুজব ছড়ানো হচ্ছে: তথ্যমন্ত্রী

দেশে অরাজকতা তৈরির অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ উপকমিটি আয়োজিত মাস্ক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন,আওয়ামী লীগ যেভাবে শুরু থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এই করোনাকালে, অন্য কোনও রাজনৈতিক দল সেভাবে দাঁড়ায়নি। শুধু সমালোচনার বাক্স খুলে তারা বসেছিল। বিএনপি তাদের দলীয় কার্যালয়, প্রেস ক্লাব আর নয়াপল্টনের রাস্তায় কিছু সমাবেশ করেছে এবং সরকারের প্রতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি বিষোদগার করেছে। করোনার শুরু থেকে অপচেষ্টা ছিল মানুষের মাঝে অহেতুক ভয় সঞ্চারের। তাদের অপচেষ্টা ছিল গুজব রটানো, অপচেষ্টা ছিল মানুষকে বিভ্রান্ত করা। সেই ক্ষেত্রে মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলো রেডিও, টেলিভিশন এবং মূলধারার অনলাইনগুলো বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। সেকারণে গুজব খুব বেশি কাজে লাগেনি।
তিনি বলেন,গত ৯ মাসে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে, বহু অপচেষ্টা হয়েছে। দেশকে পিছিয়ে দিতে মানুষকে বিভ্রান্ত করার এবং করোনার শুরুতে বহু শঙ্কা, আশঙ্কার কথা বলা হয়েছিল। সেই সসব শঙ্কা, আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে করোনাকে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালোভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন।
ড. হাছান অভিযোগ করেন, সর্বশেষ ভাস্কর্য নিয়ে অহেতুক একটি বিতর্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। যখন ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজরা আসলো, ইংরেজরা আসার আগে ভারতীয় উপমহাদেশের সরকারি ভাষা ছিল ফার্সি, ইংরেজরা আসার পর অনেকে ফতোয়া দিয়েছিলেন ইংরেজি শিক্ষা হারাম। সেই কারণে বহুবছর মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকেই ইংরেজি শিখে নাই। ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমানরা প্রথমদিকে পিছিয়ে পড়েছিল। তারপর যখন টেলিভিশন শুরু হলো ফতোয়া দেওয়া হলো টেলিভিশন দেখা হারাম এবং যখন ছবি তুলে হজে যাওয়ার নিয়ম চালু হলো তখনও এটি নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ানো হলো যে, ছবি তুলে হজে গেলে সেই হজ হবে না।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘোষণা দেওয়া হলো, ফতোয়া দেওয়া হলো যে, যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তারা সবাই কাফের। আজকে যারা এই ভাস্কর্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে, ওই যে ইংরেজি শিক্ষা হারাম, টেলিভিশন দেখা হারাম এবং ছবি তোলা হারাম, আর মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা যারা করছে, তারা সবাই কাফের। সেই ধারাবাহিকতায় তাদের প্রেতাত্তারাই কিন্তু এটি নিয়ে আজকে প্রশ্ন তুলছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
বাংলাদেশে বহু ভাস্কর্য বহু আগে নির্মিত হয়েছে। তখন কেউ প্রশ্ন তুলে নাই। ইসলামি বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশে, সৌদি আরবে মানুষের মুখায়বসহ শুরু করে নানা ধরনের ভাস্কর্য আছে। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে সেখানে ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আতাতুল্লাহ খোমেনিরও ভাস্কর্য আছে। বাংলাদেশেও আগে বহু নেতার, বহু কবি, সাহিত্যিকের ভাস্কর্য এখানে আছে। তখনতো কেউ কিছু বলেন নাই। হঠাৎ করে এই প্রশ্ন আনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত।
এত দিন ধরে স্বাধীনতাবিরোধীদের লালন করেছে, পোষণ করেছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের দিয়ে রাজনীতি করে, তারাই এটার পেছনে ইন্ধন দিচ্ছে অভিযোগ করে মন্ত্রী সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন,ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যখন মনে করিয়ে দিলো, বিনা অনুমতিতে সমাবেশ করা যাবে না, তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিলেন। আসলে তারা বিনা অনুমতিতে গত কিছুদিন হঠাৎ করে সমাবেশ আয়োজন করছে। আর তাদের উদ্দেশ্য আমরা দেখেছি, হঠাৎ চোরাগোপ্তা মিছিল বের করে গাড়ি ভাঙচুর করে। অনুমতি নিয়ে তো সেটা করতে একটু অসুবিধা হয়। তাই আজকে একদিকে গুজব আরেকদিকে ভাস্কর্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক বাবু সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মজিদ, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাউসুল আজম শাহজাদা, সিডনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আজাদসহ সাংবাদিক নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাটিভি/শহীদ