
নানা সম্ভাবনার দুয়ার খুলে ২০১৯ কে বিদায় জানিয়েছিল ২০২০ সাল। এর প্রথম দুই মাস সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও, মার্চের ৮ তারিখ থেকে মহামারি করোনা ভাইরাস সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। করোনা মোকাবেলায় বছরজুড়েই স্বাস্থ্যখাতের প্রতি সরকারের ছিল বিশেষ নজর। আর, তাই এ খাতের দুর্বলতা দুর্নীতি আর প্রয়োজনীয়তা আলোচনায় ছিল বছরজুড়ে। করোনায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়লেও, আশাব্যাঞ্জক ছিল জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি। এ বছরই দেশে আসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
গত বছর ডিসেম্বরে অচেনা করোনা ভাইরাস প্রভাব বিস্তার করে চীনের উহান প্রদেশে। তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। কঠোর সতর্কতার পরও মার্চের ৮ তারিখে দেশে প্রথম শনাক্ত হয় করোনা রোগী। আর তাই, মহামারি করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যখাতে কঠোর নজরদারি বাড়ায় সরকার। এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই উঠে আসতে থাকে দেশের নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র। মহামারি করোনা সামলানোর হিমশিম অবস্থার মধ্যেই সামনে চলে আসে স্বাস্থ্যখাতের অনিয়মসহ নানা দুর্বলতার চিত্র।
শুরু হয় করোনার পরীক্ষা আর চিকিৎসা নিয়ে নানা টালবাহানা, দুর্নীতি। জেকেজি হেলথকেয়ারের জালিয়াতির জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক সাবরিনা শারমিন হুসাইন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষায় জালিয়াতি, প্রতারণা ও অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে দেয়া মাস্ক পিপিই কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ ওঠে বেশ ক’টি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। আর এর সবকিছুর দায় বর্তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওপর। এর ধারাবাহিকতায়, পদত্যাগে বাধ্য হন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দেশের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ৬৬ দিন বন্ধ থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিল ফ্যাক্টরি, দোকানপাটসহ সবকিছু। আর তাতে, বেকার হয়ে পড়ে প্রায় ৪ কোটি মানুষ। এটি মোকাবিলায়, সরকারের পক্ষ থেকে চালু করা হয় বিশেষ প্রণোদনা। প্রায় সব ক্ষেত্রে দেয়া হয় অর্থনৈতিক সহায়তা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে প্রায় এক দশমিক ২২ লাখ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা- যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি।
তবে সারা বছর নেতিবাচক খবরের মধ্যে প্রত্যাশা জাগিয়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রবাহ আসে এ বছরের জুলাইয়ে। আশাব্যাঞ্জক ছিল জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হারও।
মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করে, সম্বাবনার দুয়ার খুলে আসবে নতুন বছর- এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
বাংলাটিভি/শহীদ