fbpx
বাংলাদেশঅন্যান্য

মহামারীকালে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব বাড়ার শঙ্কা

করোনায় দেশের দারিদ্র্য বাড়ার পাশাপাশি, অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়বে বলে আশংকা করছেন, অর্থনীতিবিদরা। আর, এ থেকে সৃষ্ট সামাজিক অবক্ষয় রোধে কাজ হারানো মানুষকে খাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে নগদ অর্থ দেয়াসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

করোনার করাল থাবায় গৃহকর্মীর কাজ হারিয়ে চরম বিপাকে ৭০ উর্ধ্ব এই বৃদ্ধা। বেঁচে থাকার তাগিদে করছেন ভিক্ষাবৃত্তি। পড়ন্ত বিকেলে এসে দুপুরের খাবার হিসেবে কিনছেন কলা।  বাংলাটিভির ক্যামেরাবন্দি হয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

এই বৃদ্ধার মত করোনার করাল গ্রাসে বিপাকে পড়েছেন আরও অনেকেই। কোভিডজনিত দারিদ্র্যের কারণে মানুষ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি, অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খেয়েছেন। ঋণ নিয়েছেন এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছেন। আর এ কারণে বিকিকিনিতেও খুব করুন দশা বলে জানান খুদে ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি প্রকাশিত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেমের এক জরিপে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক অতি দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। শুধু ভোগ নয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রের দারিদ্র্যও নিরূপণ করা হয়েছে ওই জরিপে।

বিবিএসের খানা জরিপ অনুসারে, ২০১৬ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্য ছিল ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৮ সালের জিইডি-সানেম জরিপ অনুসারে যা ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশে। শহরাঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

আর করোনার সময়ে ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশে। অর্থাৎ করোনার কারণে শহরের চেয়ে গ্রামে দারিদ্র অনেক বেশি বেড়েছে।

দারিদ্র্যের আরেকটি ফল হলো শিক্ষা গ্রহণ ব্যাহত হওয়া। জরিপে দেখা গেছে, ২০১৮ এবং ২০২০ সালের মধ্যে মাথাপিছু গড় শিক্ষাব্যয় কমেছে। অতি দরিদ্র পরিবারের জন্য এ হার হ্রাস সবচে বেশি, ৫৮ শতাংশ। পাশাপাশি, অনলাইন শিক্ষায় দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও কম। অন্যদিকে, গড় মাথাপিছু স্বাস্থ্যব্যয় বেড়েছে। মধ্যম ও অতিদরিদ্রদের ক্ষেত্রে এটি সবচে বেশি-যথাক্রমে ৯৭ ও ১০৪ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ মিজানুর রহমান বলেন, সবচেয়ে বড় বিপদটা হলো যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত স্বল্প আয়ের লোক। তাদের চাওয়ারও কোন জায়গা নেই। এই জনগোষ্ঠীকে খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখার এখনই  সময়। তাদেরকে বাইরে রেখে অর্থনীতির এই সংকটকে মোকাবেলা করা সম্ভব না।

এ অবস্থায়, বেঁচে থাকার তাগিদেই অনেকে চুরি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নেহাল করিম।

তারা বলছেন, এই করোনা সংকটের এই সময়ে সরকারের প্রধান কাজ হলো আয় যাতে না কমে তার ব্যবস্থা করা৷ আর সেটা না করা গেলে দারিদ্র্য আরো বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে, বিপাকে পড়া এসব মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সহায়তার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার পরামর্শও দেন এই বিশেষজ্ঞরা।

হাকিম মোড়ল, বাংলা টিভি

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button