জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার কঠোর বার্তা
গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি করতে অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বলেছেন, আর যেন কোনো স্বৈরাচারের হাতে পড়তে না হয়, আমরা যাতে বলতে পারি একটি গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি, সকলেই যাতে দাবি করতে পারি যে এই দেশটি আমাদের— আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে । তিনি বলেন, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
স্বৈরাচারমুক্ত দেশ গড়তে এবং গণতান্ত্রিক দেশের জন্য তিনি আইন মেনে চলার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, আপনাদের আমাদের সন্তানদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।আর যেন আমাদের কোন স্বৈরাচারের হাতে পড়তে না হয়, আমরা যাতে বলতে পারি আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি, আমরা যাতে সবাই দাবি করতে পারি যে এই দেশটি আমাদের। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গণঅভ্যুথানে সকল শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সকল আহত শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। আহতদের চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। নতুন তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে এই তালিকা হালনাগাদ হবে। গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার যাত্রালগ্নে ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এখন সে ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে। সকল শহীদ পরিবার ও আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এই ফাউন্ডেশন গ্রহণ করছে। এই ফাউন্ডেশনে দান করার জন্য দেশের সকল মানুষ এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত মাসে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও সিলেট অঞ্চলে বন্যা আক্রান্ত সবাইকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে সশস্ত্রবাহিনী। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে একযোগে কাজে নামায় মানুষের দুর্ভোগ কম হয়েছে। এর পরপরই এনজিও ও সাধারণ মানুষ দেশের সকল অঞ্চল থেকে দলে দলে এগিয়ে এসেছে। আমি বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশের সকল দুর্যোগকালে তারা সবসময় আন্তরিকভাবে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে বন্যা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদের সৈনিক ও অফিসাররা দিনের পর দিন যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছে তার কোনো তুলনা হয় না। জনজীবনে স্বস্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাদের ভূমিকা অনন্য। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে দেশের মানুষের পাশে থেকেছেন। দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দেশ গঠনেও আপনারা সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। বিগত জুলাই হতে শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থান, বন্যা, নিরাপত্তা প্রদান, অস্ত্র উদ্ধার সহ সকল কার্যক্রমে আপনারা সফলভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। যে সমস্ত ভাই-বোনেরা তাদের গত ১৬ বছরের বেদনা জানিয়ে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য আমার অফিস এবং সচিবালয়ের অফিসসমূহের সামনে প্রতিদিন ঘেরাও কর্মসূচি দিয়ে আমাদের কাজকর্ম ব্যাহত করছিলেন তারা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি থেকে বিরত হয়েছেন বটে, তবে অন্যত্র আবার তারা তাদের কর্মসূচি দিয়ে যাতায়াতে ব্যাঘাত ও সৃষ্টি করেছেন। আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের ন্যায্য আবেদনের কথা ভুলে যাবো না। আমরা সকল অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের দায়িত্বকালে যথাসম্ভব সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমি আবারও অনুরোধ করছি. আপনার যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন। জাতি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।