
টানা চার ওয়ানডে সিরিজ হার। সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভরাডুবি, কোন ম্যাচেই লড়াই জমাতে না পারা বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়। ঘরের মাঠে ফিরে দারুণ প্রত্যাবর্তনও করল মেহেদী হাসান মিরাজের দল। ১৭ মাস পর সিরিজ জিতল টিম টাইগার্স। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের পর দ্বিতীয়টিতে সুপার ওভারে হেরেছিল স্বাগতিকরা। তৃতীয় ম্যাচে রেকর্ড জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে লাল-সবুজের দলটি। সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকারের রেকর্ড জুটিতে বাংলাদেশ তিনশর কাছে সংগ্রহ গড়ে। পরে মিরপুরের মন্থর উইকেটে ক্যারিবীয়দের বোলিংয়ে চেপে ধরে টিম টাইগার্স। জয় তুলে নেয় ১৭৯ রানে। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানে জয়ের রেকর্ড। ২০১২ সালে খুলনায় ক্যারিবীয়দের আগের রেকর্ড ১৬০ রানে হারিয়েছিল টিম টাইগার্স।
রানের হিসেবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় জয় এটি। বড় জয়টি ১৮৩ রানের, ২০২৩ সালের মার্চে সিলেটে আয়ারল্যান্ডকে রেকর্ড ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আগে ব্যাটে নামে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ২৯৬ রান তোলে। ক্যারিবীয়দের রানতাড়ায় পাঠিয়ে ৩০.১ ওভারে ১১৭ রানে গুটিয়ে দেয়।
শুরু থেকেই উইন্ডিজ ব্যাটারদের চেপে ধরেন নাসুম-রিশাদরা, নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নেন সফরকারীদের। সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন ১০ নম্বরে নামা আকিল হোসেইন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ রান করেন ব্রেন্ডন কিং। ১৫ রান করেছেন আলিক আথানজে, কেসি কার্টি ও জাস্টিন গ্রিভস। ১২ রান করেন শেরফান রাদারফোর্ড।
টাইগার স্পিনার নাসুম আহমেদ ৬ ওভারে ১১ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন। রিশাদ ৯ ওভারে ৫৪ রানে নেন ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানভীর ইসলাম।
আগে ব্যাটে নেমে ১৫২ বলে ১৭৬ রানের জুটি গড়েন সাইফ ও সৌম্য। মিরপুরের উইকেটে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড এটি। ২০১৪ সালের মার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও এনামুল হক বিজয়ের করা ১৫০ রান ছিল এতদিনের সর্বোচ্চ।
সবমিলিয়ে টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি এটি। শীর্ষে ২০২০ সালে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ২৯২ রানের জুটি। মিরপুরে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটিও এটি। এ মাঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি ১৭৮। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ১৭৮ রানের জুটি গড়েছিলেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম।
সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার পাওয়ার প্লেতে ৭৪ রান তোলেন। বাংলাদেশের শতরান পূর্ণ হয় ১৫.৩ ওভারে। ফিফটি করে সৌম্য ও সাইফ দুজনেই শতকের পথে ছুঁটছিলেন। ২৫.২ ওভারে ১৭৬ রানে রোস্টন চেজ জুটি ভাঙেন। সাইফ আউট হন ৬টি করে চার ও ছক্কায় ৭২ বলে ৮০ রান করেন।
২৮.১ ওভারে সৌম্যও ফিরে যান নার্ভাস নব্বইয়ে কাটা পড়ে। আকিল হোসেনের শিকার হন ৯১ রানে। টাইগার ওপেনারের ৮৬ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ৪টি ছক্কার মার। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫০ রান যোগ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়। ৩৯.৫ ওভারে দলীয় ২৩১ রানে হৃদয় ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। ৪৪ বলে ২৮ রান করেন তিনি।
২৫২ রানে শান্ত ফেরেন ৪৪ করে। ৫৫ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি ছক্কার মার। এরপর ধস নামে বাংলাদেশের ইনিংসে। ৯ রান যোগ করতে আরও ৩ উইকেট যায়। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (৬), রিশাদ হোসেন (৩) ও নাসুম আহমেদ (১) ফিরে যান।
অষ্টম উইকেটে নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদী হাসান মিরাজ ইনিংস শেষ করেন। জুটিতে যোগ করেন ৩৫ রান। শেষ বলে মিরাজ আউট হন ১৭ বলে ১৭ রান করে। সোহান অপরাজিত থাকেন ৮ বলে ১৬ রানে।
ক্যারিবীয় বোলারদের মধ্যে আকিল হোসেইন ৪ উইকেট নেন। আলিক আথানজে নেন ২ উইকেট। রোস্টন চেজ ও গুডাকেশ মোতি নেন ১টি করে উইকেট।



