বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষায় অন্তর্ভুক্তি চায় বাংলাদেশ

বাংলাভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেলেও এখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি সংস্থাটির দাপ্তরিক ভাষার তালিকায়। এজন্য বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উত্থাপন করেও সাড়া মেলেনি। তবে প্রস্তাবটি পাসে সরকার কুটনীতিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৻ জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেলে বাংলা ভাষার মর্যাদা বা গুরুত্ব কতটা বাড়বে,আর কিভাবে তা জাতিসংঘে ব্যবহৃত হবে
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা, ইউনেস্কো ২১ফেব্রুয়ারিকে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপ্তি লাভ করে বাংলা ভাষা।
যদিও এর আগে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ৩০তম অধিবেশনে মাতৃভাষায় বক্তৃতা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেন বঙ্গবন্ধু। আরও পেছনে ফিরে গেলে রবীন্দ্রনাথের নোবেল কিংবা সত্যজিৎ রায়ের অস্কার জয়ের কথাও বলতে হয়। যা সমৃদ্ধ করেছে বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক অগ্রযাত্রাকে।
ভাষার অধিকার রক্ষায় সংগ্রামী ইতিহাস রয়েছে বাংলার। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে চলে দীর্ঘ সংগ্রাম। ১৯৫২ সালে ২১ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শাহাদাতবরণ করেন ভাষা সৈনিকরা।
বাংলাদেশ,ভারত ও সিয়েরা-লিয়নসহ বিশ্বের ১৫টি দেশের কমপক্ষে ৩শ মিলিয়ন বা ৩০কোটির বেশি মানুষের ভাষা বাংলা। সমৃদ্ধ সাহিত্য ভান্ডার আর তার সঙ্গে ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামী ইতিহাস আছে বাংলার। তাই বাংলাকে জাতিসংঘে সপ্তম দাপ্তরিক বা ব্যবহারিক ভাষা করার প্রস্তাব বেশ পুরনো।
জাতিসংঘে ছয়টি দাপ্তরিক ভাষা–ইংরেজি,ফরাসী,রুশ,স্প্যানিশ,চীনাএবং আরবি৻ দাপ্তরিক ভাষার তালিকাভুক্তির প্রত্যাশায় রয়েছে পর্তুগিজসহ আরো অনেক ভাষা। পিছিয়ে নেই বাংলাও।
গত এক দশক ধরেই বাংলাদেশ ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবি জোরালো হচ্ছে। বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাফতরিক ভাষা হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে একাধিকবার প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তাঁর এ দাবির সমর্থনে বাংলাদেশের সংসদে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয় ২০০৯ সালে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায়ও একটি সমার্থক প্রস্তাব পাশ হয়। সরকারী এ উদ্যোগ ছাড়াও, বেসরকারী এবং ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে দাবির সমর্থনে। যদিও এই দাবি বাস্তবায়নে এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি জাতিসংঘ।
এক দশক পেরিয়ে যাবার পরও বাংলা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি না মেলায় হতাশ খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। আর ভাষা বিশ্লেষকরা বলছেন,স্বীকৃতি পেতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর সমর্থন খুব জরুরী।
বাংলা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হলে নিয়মানুযায়ী বিশাল ব্যয়ভার বহন করতে হবে বাংলাদেশকে। তবে আন্তজার্তিক পরিমণ্ডলে বাংলার মর্যাদা রক্ষায় অর্থ ব্যয়ের পক্ষে মত দেন এই ভাষা বিশ্লেষক।
এশিয়ার একটি ভাষা হিসেবে বাংলাকে দপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি পেতে প্রয়োজনে ব্যাপক জনমত গঠন করে সারাবিশ্বের সমর্থন অর্জন করে জাতিসংঘকে রাজি করানো এখন বাংলাদেশের দায়িত্ব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাটিভি/শহীদ