অন্তর্বর্তী সরকারবাংলাদেশ

ঢাকার রাস্তায় বর্ণাঢ্য ঈদ আনন্দ মিছিল

এ বছর ঈদকে আরও উৎসবমুখর করতে ঈদ আনন্দ মিছিলের আয়োজন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এই মিছিলে ঢাকার ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হয়, যা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আরও বর্ণিল হয়ে ওঠে।

ব্যান্ড পার্টির বাজনা, ঘোড়ার গাড়ি এবং মুঘল আমলের ইতিহাস তুলে ধরা নানা ধরনের ছবি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ঢাকার আগারগাঁওয়ে ঈদ আনন্দ মিছিল হয়েছে।

সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় শুরুতে বাণিজ্যমেলার পুরোনো মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়; জামাতে মূল ইমামতি করেন ক্বারী গোলাম মোস্তফা।

ঈদের নামাজ শেষে সকাল ৯টার দিকে আনন্দ মিছিল শুরু হয় ডিএনসিসির উদ্যোগে।

Eid ananda 3

বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে দিয়ে আগারগাঁও হয়ে খামার বাড়ি মোড় পার হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের দিকে এগিয়ে যায় মিছিলটি। তারপর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে গিয়ে শেষ হয় আনন্দ মিছিল।

‘ঈদ মানেই সম্প্রীতি, ঈদ মানেই ঐক্য; ঈদ এল সুখের বার্তা নিয়ে’ সংবলিত নানা ধরনের সামাজিক ও ঐক্যের বার্তা তুলে ধরা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে মিছিলে অংশ নেওয়াদের হাতে। এ সময় তারা ‘ঈদ মোবারক’সহ নানা ধররেন স্লোগান তোলেন।

ওই মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।

মিছিল শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া।

ঘরে বসে কেবল টেলিভিশন না দেখে এখন থেকে প্রতিবছর বড় পরিসরে ঈদ উৎসব উদযাপন হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, “দীর্ঘ অনেকবছর পর আমরা আবার ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঈদ মিছিল আয়োজন করতে পেরেছি। আগামী দিনে আমরা প্রতিবছর এক সঙ্গে এভাবে ঈদ উদযাপন করব। আমাদের ঈদ উৎসবও এখন থেকে আনন্দময় হবে। ঘরে বসে টিভি দেখে আর ঈদ কাটবে না। আমরা একসাথে ঈদ মিছিল করব। ঈদের মেলা উপভোগ করব। একে অপরের সাথে সুখদুঃখ সব ভাগবাটোয়ারা করে নেব।”

এ সময় পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ঈদ মেলা উপভোগের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সরকারের এ উপদেষ্টা।

সজীব বলেন, “এবার সময় স্বল্পতার কারণে অনেক সীমাবদ্ধতা কিন্তু সবকিছু আয়োজন করা হয়েছে, তবে ভবিষ্যতে আমরা আরও বড় পরিসরে এই ঈদের উৎসব আয়োজন করব।”

মিছিলের আগে অংশগ্রহণকারীদের সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় ডিএনসিসির পক্ষ থেকে, বিতরণ করা হয় বাতাসাও।

Eid ananda2

নিরাপত্তা নিশ্চিতে মিছিলের সামনে ও পেছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম, সোয়াটের বিশেষ ইউনিটের সদস্যরা ছিলেন। এছাড়া সংসদ ভবনের সামনে সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়িও দেখা গেছে।

আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে এর আগে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “এই ঈদ মিছিল ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনী গত এক সপ্তাহ ধরে কাজ করছে। পুরো এলাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। রাজধানীর মানুষরা তাদের পুরো পরিবার নিয়ে সবাই যেন উপভোগ করতে পারেন এই ব্যবস্থা থাকছে ডিএনসিসির ঈদ আনন্দ উৎসবে।”

তিনি বলেন, ‘‘নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার এই ঈদ আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণে সুযোগ আছে, অন্যান্য ধর্মামাবলম্বীরাও আসবেন। আনন্দ মিছিলের মাধ্যমে ঢাকার ৪০০ বছরের ঈদ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা থাকছে।”

বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী ঈদ মেলারও আয়োজন করেছে ডিএনসিসি; সেখানে ২০০টির মতো স্টল রাখা হয়েছে।

সেসব স্টলে ‘নানা ধরনের পণ্য সামগ্রী ছাড়াও খাবারের দোকানও আছে। এই মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

মেলায় শিশু বিনোদনের জন্যও নানা আয়োজন রাখা হয়েছে।

জানা যায়, মিছিলে ছিল সুসজ্জিত পাঁচটি শাহী ঘোড়া, ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, ব্যান্ড পার্টি ও বাদ্যযন্ত্র। এছাড়া, সুলতানি-মোগল আমলের ইতিহাসচিত্র সম্বলিত পাপেট শো আয়োজন করা হয়, যা অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগ করে। মিছিল শেষে অংশগ্রহণকারীদের সেমাই ও মিষ্টি খাওয়ানো হয়। পরে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই আয়োজন শেষ করা হয়।

অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, এমন আয়োজন যদি প্রতিবছর হয়, তাহলে ঈদের আনন্দ আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button