নারায়ণগঞ্জে সরকারি চিকিৎসায় আস্থা ফেরাতে ডিসির অভিনব উদ্যোগ

নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যার খানপুর হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসা সেবায় স্বচ্ছতা আনতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা। রোগী রেফারের অভিযোগ দূর করতে হাসপাতালে চালু হয়েছে হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এবং তিনটি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে স্থাপন করা এই বোর্ডগুলোতে প্রতিদিন দেখা যাবে— কতজন রোগী ভর্তি হয়েছেন, কতজন রিলিজ পেয়েছেন এবং কোন কারণে কতজন রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল—খানপুর হাসপাতাল চিকিৎসা না দিয়ে রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধু কিডনি, ব্রেইন স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়েই রেফার করা হয়। এই বিতর্কের বাস্তব চিত্র জানতে এবং সেবায় আস্থা ফেরাতে জেলা প্রশাসনের এই ডিজিটাল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে—রোগীরা হাসপাতালে এলেই রেফার করা হয়। কিন্তু আমরা দেখি, প্রতিটি বেডেই রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত মাসে প্রায় ৬৫ হাজার রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা চাই, আসল চিত্রটি সবার সামনে আসুক।”
তিনি আরও বলেন, “এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রতিদিনের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদর্শিত হবে—কতজন ভর্তি, রিলিজ বা রেফার হয়েছেন এবং কেন রেফার করা হয়েছে। এতে হাসপাতাল নিয়ে থাকা ভুল ধারণা দূর হবে।”
ডিসি জাহিদুল জানান, “সরকার সাধারণ মানুষের জন্য হাসপাতাল তৈরি করেছে—মানুষ যেন এখানে আস্থা নিয়ে আসে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। এখন থেকে সাংবাদিক বা রোগীর স্বজন—সবাই সহজেই জানতে পারবেন প্রতিদিন কতজন চিকিৎসা নিয়েছেন।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাসার বলেন, “প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এই মাসে প্রায় ২০০টি বড় অপারেশন হয়েছে। তবে কিছু রোগীকে রেফার করতেই হয়, কারণ এখানে এখনো হার্ট, ব্রেইন ও কিডনি বিভাগের সুবিধা নেই। ভবিষ্যতে ৫০০ শয্যা অনুমোদন কার্যকর হলে এসব বিভাগ চালু করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ডিজিটাল বোর্ড চালু হওয়ায় রোগী ও হাসপাতালের মধ্যে আস্থার সংকট দূর হবে, সেবার মান আরও উন্নত হবে।”
জেলা প্রশাসক জানান, হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদারে ৩০ জন আনসার সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন ডা. এ. এফ. এম. মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, হাসপাতালের চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা।



