fbpx
বাংলাদেশ

স্বপ্নের সেতু দিয়ে পদ্মা পাড় হলো বিশেষ ট্রেন

উত্তাল পদ্মার বুক চিরে সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু করেছে অনেক আগেই। এবার দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গতিময় ও বহুমাত্রিক করতে যুক্ত হলো নতুন পালক। প্রথমবারের মতো স্বপ্নের সেতু দিয়ে পদ্মা পাড় হলো বিশেষ ট্রেন।

আজ দুপুর আড়াইটার দিকে ‘বিশেষ ট্রেন’ পদ্মা সেতুতে উঠে। বিশেষ এ ট্রেন ঘন্টায় গড়ে ২৫ কিলোমিটার গতিতে এ পথ পাড়ি দিয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার(৪ এপ্রিল) ভাঙ্গা রেল জংশন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ‘বিশেষ ট্রেন’ যাত্রা শুরু করে বেলা ১ টা ২১ মিনিটে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এ যাত্রার উদ্বোধন করেন।

ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক এই ট্রেন সফরে আরো ছিলেন জাতীয় সংস‌দে চিফ হুইপ নু‌র ই আলম চৌধুরী লিটন, পা‌নি সম্পদ উপ মন্ত্রী একে এম এনামুল হক শামীম, সংসদ সদস‌্য ও আওয়ামী লী‌গের প্রচার সম্প‌াদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সংসদসদস‌্য ও আওয়ামী লী‌গের কার্যনির্বাহী সদস‌্য ইকবাল হোস‌নে অপু, সংসদ সদস‌্য ম‌জিবুর হো‌সেন‌ চৌধুরী নিক্সন প্রমুখ।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আজ পরীক্ষামূলকভাবে এ ট্রেনের যাত্রা শুরু হলো। সেপ্টেম্বরে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা রুটে যাত্রী চলাচল শুরু করবে। প্রধানমন্ত্রী দ্রুতই এ পথের উদ্বোধন করবেন।

এদিকে পদ্মা সেতুতে চলাচলকারী বিশেষ ট্রেনের চালক হয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে গর্বিত লোকো মাস্টার রবিউল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমি যখন প্রথম জানতে পারলাম যে প্রথম ট্রেন চালাবো তখন থেকেই উচ্ছ্বাস কাজ করছে। ইতিহাসের অংশ হতে পারে নিজেকে গর্বিত লাগছে।

গত ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা নদীর ওপর সড়ক সেতুর উদ্বোধন হলেও অপেক্ষা ছিলে কবে চালু ট্রেনপথের। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটছে।

বর্তমানে রেলপথে ঢাকার সঙ্গে খুলনার দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন রেলপথটি চালু হলে দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। তখন ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব হবে ১৬৯ কিলোমিটার।

একইসাথে কুষ্টিয়া, দর্শনার সাথেও কমবে দূরত্ব ও ভোগান্তি কমবে। অন্যদিকে ফরিদপুর, রাজবাড়ী রুটের সাথে সংযুক্ত হয়ে নতুন পথে নতুন রেলযাত্রী তৈরি হবে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা দিয়ে যশোরের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে।

২০২৪ সালের জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে।

একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে প্রাক্কলনটি তৈরি করেছে সিআরইসি।

এ বিষয়ে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার পুরো ৪২ কিলোমিটার পথে গ্যাংকার চালানোর পরিকল্পনা আছে।

অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশের বেশি। আর পুরো প্রকল্পকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের অগ্রগতির ৭৪ ভাগ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯২ ভাগ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ।

তবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটারের অংশে আগামী সেপ্টেম্বর যাত্রীবাহী রেল চলাচলের আশা করছেন প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন।

এরইমধ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার এই রেলপথে লেভেল ক্রসিংবিহীন ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে।

চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের রেল স্টেশনসহ নতুন ১৪টি স্টেশন নির্মাণ এবং পুরনো ছয়টি স্টেশনের কাজ।

প্রসঙ্গত, দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের প্রথমে যে পরিকল্পনা করা হয়, তাতে রেলওয়ে ট্রাক বসানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর রেল চালুর বিষয়টি যুক্ত করা হয়। সড়ক সেতুর নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করায় ঢাকার সঙ্গে যশোর রেললাইন নির্মানে আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত যেখানে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ধরা হয়েছে রেল সংযোগের ব্যয়।

ইমন/বাংলা টিভি

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button