সংবিধানের বিধানাবলি সঠিকভাবে অনুসরণের আহবান রাষ্ট্রপতির
রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগের সদস্যদেরকে তাদের দায়িত্ব পালনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংবিধানের বিধানাবলি সঠিকভাবে অনুসরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
আজ শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংবিধান দিবস উপলক্ষ্যে এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি আশা করি জাতীয় সংবিধান দিবস পালনের মাধ্যমে এ দেশের জনগণ সংবিধানে বিধৃত তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হবে এবং রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগের সদস্যগণ তাদের দায়িত্ব পালনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংবিধানের বিধানাবলি সঠিকভাবে অনুসরণ করবে।’
মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, আগামীকাল ৪ নভেম্বর, জাতীয় সংবিধান দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মরণীয় দিন। জাতীয় সংবিধান দিবসে তিনি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত জনতার মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। তাঁর নেতৃত্বে ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ১০ এপ্রিল গণপরিষদের ১ম অধিবেশনে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন’ করা হয়। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘খসড়া সংবিধান’ বিল আকারে উত্থাপন করা হয়। বিলের ওপর আলোচনা শেষে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’ গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর গণপরিষদের সদস্যগণ হাতে লিখিত সংবিধানের মূল কপিতে স্বাক্ষর করেন এবং ১৬ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়। স্বাধীনতার এক বছরের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু দেশকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান উপহার দেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সংবিধানে শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা এবং সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার করা হয়। সংবিধান একটি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগের কার্যপরিধিসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ামক দলিল। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে। জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান পৃথিবীর সুলিখিত সংবিধানগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তিস্বরূপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুন্ন রাখা এবং ইহার রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান আমাদের সকলের পবিত্র কর্তব্য। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার জন্য আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।’