fbpx
বিশ্ববাংলা

ইতিহাসে তায়েফ নগরী

সৌদি আরবে অবস্থিত তায়েফ নগরী। যার দূরত্ব পবিত্র মক্কা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬ হাজার ফুট। পুরো শহরটিই গড়ে উঠেছে পাহাড়ের ওপর। মক্কা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে তায়েফ যেতে।

মক্কায় যখন তাপমাত্রা ৪০-৪২ তখন তায়েফে মাত্র ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর এখন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি। ঐতিহাসিক তায়েফ শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।

ইতিহাসের পাতায় তায়েফ নানা কারণে আলোচিত। এ তায়েফের বনি সাকিফ গোত্রে নবী করিম (সা.) দুধমাতা হযরত হালিমা সাদিয়ার ঘরে লালিত-পালিত হয়েছিলেন। আবার নবুওয়ত প্রাপ্তির পর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে তায়েফ গিয়েছিলেন ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে।

কিন্তু তায়েফবাসী ইসলাম গ্রহণের পরিবর্তে নবীকে অত্যাচার ও নিগ্রহ করেছেন। ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তায়েফে প্রায় ১০ দিন অবস্থান করেছিলেন। তারপর ফিরে গেছেন তায়েফবাসীর নানা নির্যাতন সহ্যকরে। এরপরও মোহাম্মদ (স:) তায়েফ বাসীর জন্য দোয়া করে গেছেন।

রবি শস্য ও নানা ফল-ফলাদির জন্য তায়েফ বিখ্যাত। তায়েফে উৎপন্ন আঙ্গুর, কমলা, আনার ইত্যাদি অতি দামী ফলফলাদি মিষ্টি ও পুষ্টিতে ভরপুর। বিশেষ করে তায়েফের আঙ্গুর বিখ্যাত। এছাড়া তায়েফে উৎপাদিত সবজি সৌদি আরবের চাহিদার প্রায় ৩০ভাগ পূরণ করে। আর এ গুলো উৎপাদন করেন বাংলাদেশী রেমিটেন্স যোদ্ধারা।

এছাড়া তায়েফকে বলা হয়,ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভূমি। চমৎকার সাজানো-গোছানো শহর। শহড়জুড়ে রয়েছে নানা ভাস্কর্য।

হযরত আব্দুল্লা  ইবনে আব্বাস মসজিদ তায়েফ শহরে অবস্থিত। এটিই তায়েফের কেন্দ্রীয় মসজিদ, এখানে তার মাজারও অবস্থিত। হযরত আব্দুল্লা ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হলেন, রাইসুল মোফাচ্ছেরিন-অর্থাৎ এ দুনিয়াতে যত মুফাস্সিল তফসিল কারক রয়েছেন সবার প্রধান হিসেবে তিনি আজীবন থাকবেন।

হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যদি কখনও কোরআন,হাদিস,এর ব্যাখ্যার ব্যাপারে কোন সমস্যায় পড়তেন যেগুলো কোরান হাদিসে সরাসরি ছিল না, তার ব্যাখ্যা তিনি আব্দুল্লা ইবনে আব্বাস এর কাছ থেকেই নিতেন। মসজিদ সংলগ্ন একটি লাইব্রেরি আছে।

সেটা অবশ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। তবে সেখানে প্রাচীন অনেক কিতাবের সংগ্রহ আছে। বর্তমানে এর ভেতরে এবং মাজারে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। তার কিছু অভ্যন্তরীন কারণও রয়েছে। তারপরও হজ এবং উমরাহতে আসা হাজিরা এ মসজিদটি দেখতে এ তায়েফ শহরে আসেন।

হযরত আলী (রা:) এর মসজিদ এর একটু সামনেই সেই বিখ্যাত বুড়ির বাড়ি। এটিও তায়েফ শহরে অবস্থিত। আর বুড়ির বাড়ির পাশে ছিল একটি বড়ই গাছ, সাথে ছিল একটা মসজিদ যেখানে মোহাম্মদ (স:) নামাজ পড়তেন, আর দুষ্ট বুড়ি রাস্তায় কাঁটা দিয়ে রাখতেন। সেই বুড়ির বাড়িটি এখনো সাদা মাটাই রয়ে গেছে।

হজ ও  ওমরায় আসা হাজিরা এ বাড়িটি দেখতে আসেন।তবে এখন ভেতরে প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কারণ অনেকে সেখানে গিয়ে বিভিন্ন নিয়ত করে তাবিজ কবজ দোয়া ও পরিস্কার পরিছন্ন করে,যা সেদেশের মানুষ বিদআত বলে মনে করেন। ঐতিহাসিক হলেও এখানে নেই কোন সাইনবোর্ড, নেই কোন বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

এই বুড়ির বাড়ির পেছনে রয়েছে একটি পাহাড়।যে পাহাড়ে একটি বড় পাথর এখনো ঝুলে আছে। ইসলাম প্রচারে আসা মোহাম্মদ (স:) কে তায়েফ বাসি রক্তাক্ত করে ফেলতেন, তখন ফেরেস্তারা এ পাথরটি ফেলে তায়েফকে ধ্বংস করে ফেলতে চেয়েছিলেন।

এছাড়াও মসজিদ আল কুহ, মসজিদে আদমসহ আরো বেশ কিছু মসজিদ, হুজুর সা:-এর দুধ মা হালিমার বাড়ি, দৃষ্টি নন্দন পার্ক, হোটেল রেস্তোরা, স্কুল ও হাসপাতাল দিয়ে সমৃদ্ধ এ তায়েফ শহর।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button