গঙ্গা ও তিস্তা পানি-চুক্তিতে গ্যারান্টি ও আরবিট্রেশন ক্লজ জরুরী: আইএফসি

আন্তর্জাতিক ফারাকা কমিটি আইএফসি শনিবার এক যৌথ বিবৃত্তিতে ঢাকা ও দিল্লীকে গ্যারান্টি ও আরবিট্রেশন ক্লজসহ গঙ্গা পানি-চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তা পানি-চুক্তি সম্পাদন করার আহবান জানিয়েছে।
উভয় দেশের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি নদী বাঁচিয়ে রাখতে উৎস থেকে সাগর পর্যন্ত প্রবাহ বজায় রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করারও আহবান জানানো হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ছাড়া উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ নেপাল ও পাকিস্তানের সাথে ভারতের স্বাক্ষরিত পানি-চুক্তিগুলিতে গ্যারান্টি ও আরবিট্রেশন ক্লজ রয়েছে। ফলে সিন্ধু ও মহাকালী পানি চুক্তিগুলি পারস্পরিক স্বার্থরক্ষা করতে সমর্থ হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে স্বাক্ষরিত গঙ্গা পানি-চুক্তি শর্তপূরণ করেনি। এবং এই ত্রুটির জন্য বন্ধু প্রতীম দুই দেশের সম্পর্কের আশানুরুপ উন্নয়ন হয়নি।
বাংলাদেশের সাথে পরামর্শক্রমে ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে মোট ৪১ দিনের জন্য গঙ্গার উপর নির্মিত ফারাক্কা বাঁধটি পরীক্ষা মূলকভাবে চালু করা হয়েছিল।
তখন থেকে একতরফা পানি প্রত্যাহার চলতে থাকে এবং বাংলাদেশে দেখা দেয় পরিবেশগত বিপর্যয়। পরে ১৯৭৭ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় শতকরা ৮০ ভাগ পানি প্রাপ্তির গ্যারান্টি ক্লজসহ।
এ চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ হবার পর নবায়ন না করে গ্যারান্টি ক্লজ বাদ দিয়ে ১৯৮২ সালে ৫ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়।
গঙ্গার পানি বণ্টনের জন্য ৩০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৬ সালে। এ চুক্তি ২০২৬ সালে তামাদি হয়ে যাবে। তাই এই চুক্তির নয়ায়ন ও তিস্তা পানি চুক্তি সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাম্প্রতিক দিল্লী সফরের সময় তাগিদ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ গঙ্গা চুক্তির শর্ত অনুসারে পানি পায় নি। তা নিয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপও নিতে পারেনি। চুক্তিতে গ্যারান্টি ও আরবিট্রেশন ক্লজ ছিলনা। নবায়নের সময় চুক্তির এই দূর্বলতা অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে হবে।
তিস্তা নিয়ে চুক্তি হবার কথা ছিল ২০১১ সালে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরের সময়। পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধোপাধ্যায় দোহাই দিয়ে এ পর্যন্ত তা অসম্পন্ন রাখা হয়েছে। শুকনা মৌসুমে তিস্তা নদীর কোন পানি বাংলাদেশকে দেয়া হয়না। পশ্চিম বঙ্গের গজল ডোবা বাঁধ চুইয়ে সামান্য কিছু পানি বাংলাদেশে আসে। বর্ষাকালে বন্যার পুরো পানি ছেড়ে দেয়ায় প্রতিবছর বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় ভয়াবহ বন্যাও তীর ভাঙ্গনের ফলে হাজার হাজার বাড়ীঘর বিলীন হয় এবং ব্যাপক ফসল নষ্ট হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উৎস নদী থেকে। কাজেই নদীর অব্যাহত প্রবাহের সাথে বাংলাদেশের মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্ন জড়িত। এখন তিস্তাসহ অন্যান্য যৌথ নদীতে বাঁধ নির্মান করে একতরফা পানি প্রত্যাহার আরও বেড়েছে।
বাঁধ দিয়ে অপরিনামদর্শি স্বপ্ন মেয়াদী সুবিধা ভোগের জন্য নদীর গতি পরিবর্তন করে এই প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমরা তার অবসান চাই।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন আইএফসি, নিউ ইয়র্ক-এর মহাসচিব, সৈয়দ টিপু সুলতান, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মাদ হোসেন খান, সাংগঠনিক সম্পাদল আতাউর রহমান আতা আইএফসি বাংলাদেশের সভাপতি, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইরফানুল বারী এবং আইএফসি সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদার প্রমূখ।
বাংলা টিভি/ রাজ



