জামালপুর কারাগারে বিদ্রোহ: নিহত ৬, আহত ৪
জামালপুর জেলা কারাগারে বন্দিদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আরও চার বন্দিসহ আহত হয়েছেন সাতজন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কারাগারের ভেতরে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে রাতে কারাগারের পরিস্থিতি পুরোটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, কোনো বন্দি পালাতে পারেননি বলে জানিয়েছেন কারাধ্যক্ষ আবু ফাতাহ।
সংঘর্ষে নিহত বন্দিরা হলেন- আরমান, রায়হান, শ্যামল, ফজলে রাব্বি বাবু, জসিম ও রাহাত। তারা সবাই জামালপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা।এছাড়া, আহতদের মধ্যে তিনজন কারারক্ষীর নাম জানা গেছে। তারা হলেন– রোকনুজ্জামান, সাদেক আলী ও জাহিদুল ইসলাম।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত চার বন্দী ও তিন কারারক্ষীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে জামালপুরে কারাবন্দিরা তাদের থাকার জায়গায় আগুন দিয়ে একটি ফটক ভেঙে ফেলে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা গতকাল থেকে কারাগার এলাকা ঘিরে রাখে।
জেল কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার আসামিরা দুইভাগে বিভক্ত হয়। তাদের একটি পক্ষ মুক্তির জন্য বিদ্রোহ করে। তারা দুই পক্ষ মারামারি শুরু করে। পরে ওই বিদ্রোহী গ্রুপ প্রথম গেট ভেঙে কারাগার থেকে বের হয়ে আসে। দ্বিতীয় গেট খুলে দেয়ার জন্য জেলার আবু ফাতাহসহ করারক্ষীদের ওপর আক্রমণ করে তারা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কারারক্ষীদের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কারাগারে অবস্থান নেন।
কারাধ্যক্ষ আবু ফাতাহ জানান, দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে কারাগারে বিদ্রোহ করা নিয়ে বন্দিদের মধ্যে দুইটি পক্ষ তৈরি হয়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে কারাগারের ভেতরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
সংঘর্ষ ঠেকাতে গেলে বন্দিরা প্রথমে জেলারকে মারধর ও জিম্মি করে কারাগার থেকে বের হবার চেষ্টা করে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছুড়ে কারারক্ষীরা।
পরে বিক্ষুব্ধ বন্দিরা কারাগারের ভেতরের দুইটি ভবন, জেলারের কক্ষ ও প্রধান গেইটের ভেতরে একটি গেইট ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করে। বন্দিদের কাছে জিম্মি হয় ১৪ কারারক্ষী।
পরে কারাগার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। সন্ধ্যায় জিম্মি কারারক্ষীদের ফেরত দেয় বন্দিরা। রাত ৩টায় কারাগারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
জেলার আবু ফাতাহ বলেন, সংঘর্ষে চলাকালে কারাগারে ১০ জন বন্দি আহত হন। তাদের মধ্যে পাঁচ জন কারাগারের ভেতরেই মারা যান, হাসপাতালে নেওয়ার পর আরেকজন মারা যান।
কারাগারের ক্ষতিগ্রস্ত ফটক ও ভেতরে অন্যান্য ভবন দ্রুত মেরামতের জন্য গণপূর্ত বিভাগ কাজ শুরু করেছে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, জামালপুর জেলা কারাগারে বন্দি আছেন ৬৬৯ জন, তাদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত রয়েছেন ১০০ জন। এই কারাগারে কোনো জঙ্গি কয়েদি নেই।