fbpx
বাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

মানহানির ৫ মামলায় খালেদা জিয়া খালাস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য এবং ভুয়া জন্মদিন উদযাপনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের আমলে দায়ের হওয়া মানহানির পাঁচ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেন একটি মামলায় এবং অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. মাহাবুল হক অপর চারটি মামলায় তাকে খালাসের এই রায় দেন।

মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এই চারটি মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। বাকি একটি মামলার বাদী সাংবাদিক গাজী জহিরুল ইসলাম।

সবকটি মামলায় খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার।

রায়ে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিজ্ঞ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গত ৩ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের আদেশে নথি বিচার নিষ্পত্তির জন্য অত্র আদালতে বদলি হয়ে আসে এবং তারপর থেকে বাদী আসেনি। বাদী মামলার বিষয়ে আগ্রহ হীন মর্মে প্রতীয়মান হয়।

“তাই মামলার শুনানি মুলতবি রাখার সুযোগ নাই এবং এই কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৭ ধারার বিধান মতে আসামিদ্বয়কে খালাস দেওয়া হল।”

এ মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরেক আসামি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনিও খালাস পেয়েছেন।

মো. মাহাবুল হকের আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো সামাদুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলার বাদী এ বি সিদ্দিকী দীর্ঘদিন আদালতে উপস্থিত হননি, তাই খালেদা জিয়াকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজা হলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যেতে হয় খালেদা জিয়াকে। দুদকের আপিলে ওই বছরেরই অক্টোবরে হাই কোর্ট তার সাজা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে। একই মাসে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাতেও সাজার রায় হয় খালেদা জিয়ার। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি।

২০২০ সালের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছিল।

গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৭ অগাস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।

কোন মামলা কবে

জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মানহানির মামলা করেন।

ওই মামলায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ আনা হয় খালেদা জিয়া ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া দাবি করেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘স্বাধীনতা চাননি’, বরং তিনি ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন’। এছাড়া শহীদদের সংখ্যা নিয়ে তিনি ‘বিতর্কিত মন্তব্য’ করেন।

এ মামলায় বাদী এ বি সিদ্দিকী ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন আসামিদের কাছ থেকে।

এ বি সিদ্দিকী আরেকটি মামলা করেন ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর। অভিযোগে বলা হয়, খালেদা জিয়া ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকার শাহবাগের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে হিন্দু সম্প্রদায়ের শুভ বিজয়া অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দেন, যা ‘ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি’ করে এবং ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করে।

“খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশধারী বলেন এবং অভিযোগ করেন যে দলটি ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগকে জবরদখলকারী সরকার বলেন এবং হিন্দুদের সম্পত্তি দখল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।”

২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়া এবং তার প্রয়াত স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মানহানি এবং ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ করে আরেকটি মামলা করা হয়।

এ বি সিদ্দিকী ওই মামলায় জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, “খালেদা জিয়া ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরের সাথে জোট করে সরকার গঠন করেন এবং তাদের মন্ত্রী ও এমপি হিসেবে নিয়োগ দেন, যা বাংলাদেশের মান-সম্মানকে ক্ষুণ্ন করেছে।

“১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমান সামরিক সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেন এবং বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হুমকি দিয়ে তার বাবার বাড়িতে প্রবেশ করতে বাধা দেন। ”

পরের বছর ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারিতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন এ বি সিদ্দিকী।

ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৬ সালেন ৩১ ডিসেম্বরে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বর্তমান সরকার সম্পর্কে ‘মানহানিকর বক্তব্য’ দেন।

“খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে তার মানহানি করেছেন এবং জাতির পিতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে যুবসমাজের কাছে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। এছাড়া খালেদা জিয়া বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দিয়েছেন যা দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।”

খালেদা জিয়ার নামে আরেকটি মামলা হয় ২০১৬ সালের ৩০ অগাস্ট। ঢাকার একটি আদালতে এই মামলাটি করেন সাংবাদিক গাজী জহিরুল ইসলাম।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ অগাস্টে জাতীয় শোক দিবসে তার ‘ভুয়া জন্মদিন’ উদযাপন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি ‘অশ্রদ্ধা’ প্রদর্শন করছেন।

মামলায় বাদী বলেন, “খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন তারিখে তার জন্মদিন পালন করে দেশকে বিভ্রান্ত করছেন এবং জাতির চেতনার সাথে প্রতারণা করছেন।”

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button