বর্জ্য থেকে শিল্প গড়েন যে শিল্পী
পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ দিয়ে তৈরি শিল্পের প্রদর্শনী হচ্ছে নাইজেরিয়ার এক মিউজিয়ামে৷ পরিবেশ বাঁচাতে পণ্যের পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চায় জাদুঘরটি৷
কখনো মিউজিয়ামে গিয়ে ভেবেছেন এটা কেমন আবর্জনা? কিংবা ‘‘এমনটা আমিও করতে পারি?” এজন্য ময়লার পাত্রে একটু ঘাঁটাঘাটি করতে হবে এবং কিছু টুকরা একত্র করতে হবে৷ হ্যাঁ, নাইজেরিয়ার এক মিউজিয়ামে সেসবই হচ্ছে৷
ওয়েস্ট মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা জুমোকে ওলোউকেরে বলেন, ‘‘এটা এক নতুন ধারণা৷ আগে কেউ আবর্জনার মিউজিয়াম তৈরি করতে চায়নি৷”
নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইবাদনের কেন্দ্রে মিউজিয়ামটির অবস্থান৷ আফ্রিকায় এমন উদ্যোগ আর নেই৷ মিউজিয়ামটিতে সবকিছুই আবর্জনা দিয়ে তৈরি৷ জুমোকে কেন এমন মিউজিয়াম তৈরিতে আগ্রহী হলেন জেনে নেয়া যাক৷
জুমোকে ওলোউকেরে বলেন, ‘‘আমি রান্নাঘরের ময়লায় হোঁচট খেয়েছিলাম… তখন আমি ভাবতে শুরু করি যে, প্রতিদিন আমরা যে আবর্জনা তৈরি করি, সেগুলো ফেলে না দিয়ে আর কী করা যায়? কেউই আমাকে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়নি, কারণ, এটা অর্থহীন শোনাচ্ছিলো৷ কিন্তু আমি সেই ধারণা বাদ না দিয়ে আবর্জনা দিয়ে আর কী কী করা যায়, সেটা ভেবেছি৷’’
আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদিত হয় নাইজেরিয়ায়৷ সেখানে নিত্যদিনের কর্মকাণ্ডে প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷প্লাস্টিক স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ কিন্তু জুমোকে কেন এমন আবর্জনা ভিন্নভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলেন?
জুমোকে ওলোউকেরে বলেন, ‘‘আমি আবর্জনার প্রেমে পড়ে গেছি এবং আমি সেগুলো ফেলে দিতে চাই না৷ প্রতিটি আবর্জনা আমি রক্ষার চেষ্টা করছি, মনে হচ্ছে উদ্ধার অভিযানে রয়েছি৷ যে আবর্জনাটি আমি রক্ষা করতে পারছি, সেটা আর ভাগাড় বা সাগরে গিয়ে পড়ছে না৷ এটাই আমার অনুপ্রেরণা৷ তাই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি৷’’
সাবেক ভিজ্যুয়াল আর্ট শিক্ষক জুমোকো ২০২২ সালে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক চুক্তিসংক্রান্ত জাতিসংঘের এক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, নাইজেরিয়ায় অধিকাংশ বর্জ্যই পানিতে গিয়ে পড়ে৷ আর এটা সাগরের জলে প্লাস্টিকের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে৷ আবর্জনা পুনর্ব্যবহারের জুমোকোর ধরন একটু অন্যরকম মনে হতে পারে কিন্তু অর্থবহ৷
মিউজিয়ামের অতিথি ওপে ওসিসান্যা বলেন, ‘‘মুক্তবিশ্বের যে ধারণাটি তিনি অর্জন করতে চাচ্ছেন, তা হচ্ছে, ‘জিরো ওয়েস্ট’৷ এটা এক তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার যা আমাদের সবার বাড়িতে এবং আমাদের চারপাশে প্রয়োগ করা উচিত৷ এটা আমাদের দেশকে বসবাসের জন্য আরো ভালো করে তুলবে৷ তার উদ্যোগ রোগবালাই এবং দরকার নেই এমন অসুস্থতারোধে সহায়ক হবে৷ পাশাপাশি এক টেকসই, সবুজ পরিবেশ তৈরি করবে যা আমরা সবাই উপভোগ করতে পারি৷’’
জুমোকে এবং তার মতো একই আদর্শে অনুপ্রাণিত শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করছে মিউজিয়ামটি৷ তিনি তরুণদেরকে কিভাবে বর্জ্য থেকে দরকারি, টেকসই এবং সাশ্রয়ী পণ্য তৈরি করা যায় তাও শেখাচ্ছেন৷ এগুলো বিদ্যালয়ের খেলার মাঠেও ব্যবহার করা যায়৷
জুমোকে ওলোউকেরে বলেন, ‘‘আমরা সূত্র থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করি৷ গত কয়েকবছর ধরে বিভিন্ন পরিবার, বন্ধুবান্ধব, স্কুল এবং সংগঠন থেকে আমরা আবর্জনা সংগ্রহ করে আমরা আপসাইক্লিং করছি, রিসাইক্লিং নয়৷ সুতরাং আমরা দূষিত বর্জ্য ব্যবহার করছি না৷ আমরা এমন উৎস থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করি যা দূষিত নয়৷’’
জুমোকের এই সংগ্রাম সহজ নয়৷ কিন্তু তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে চান৷ জুমোকে ওলোউকেরে বলেন, ‘‘আমি যদি আজকে দশ কেজি প্লাস্টিক বোতল বাঁচাতে পারি, তাহলে সন্তুষ্ট হবো এবং কালকে আরো করতে উৎসাহিত হবো৷’’
তাছাড়া কে-ইবা ভেবেছিল বর্জ্যও দেখতে এমন সুন্দর হতে পারে? ডয়চে ভেলে