fbpx
বাংলাদেশবিশেষ প্রতিবেদন

‘এখনো প্রকাশ করার অনেক কিছু আছে, মিডিয়া সব প্রকাশ করছে না’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে সংবাদ মাধ্যমের অবস্থা নিয়ে৷

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, আগে যেটা ছিল সেটা তো ‘গদি মিডিয়া’৷ আগে তো বাংলাদেশে সেই অর্থে সাংবাদিকতা আমরা দেখিনি৷ সাংবাদিকতা যেটা একটা চ্যালেঞ্জিং, সেটা তো ছিল না৷ তবে এখন পর্যন্ত আমি তার কোনো পরিবর্তন দেখছি না৷ আগের মতোই৷ এখনো তো আমরা মিডিয়ায় অনেক কিছু দেখছি না৷ জানি না সরকারের এখানে ভূমিকা কী৷ মিডিয়া , সাংবাদিক যে ফ্রিডম এনজয় করে সেটা এখানো আসেনি৷ মনে হয় সেটা হতে আরো সময় লাগবে৷

কী বৈশিষ্ট্যের কারণে আগের এবং এখনকার মিডিয়া  একই মনে হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,আমার মনে হয় আমাদের মিডিয়াগুলো আগে থেকেই প্রো-পাওয়ার হয়ে গেছে৷ সেল্ফ সেন্সরশিপ আরোপের যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তা থেকে তারা বের হতে পারেনি৷ তারা আগের সরকারের অন্যায়-অনাচার চেপে রাখতো, প্রকাশ করতো না৷ আর এখনো প্রকাশ করার অনেক কিছু আছে, কিন্তু মিডিয়া সব কিছু প্রকাশ করছে না৷ এই যে মেরে ফেলা, মব জাস্টিস মিডিয়ায় ঠিক মতো আসছে না৷ তবে আমি মনে করি, যত সময় যাবে, মিডিয়া হয়ত আরো স্বাধীন হবে৷

এখন সংবাদ মাধ্যম  নিরপেক্ষভাবে সবকিছু প্রকাশ করছে কিনা এমন প্রশ্নে  আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, আপনি দেখেন লিঞ্চিং, মব জাস্টিস সবখানে হচ্ছে৷ এটা কেন হবে? এটা সংবাদমাধ্যমে আরো ডিটেইল আসা উচিত৷ সরকার, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তো এখানে ব্যর্থতা বলবো না, বিচ্যুতি  আছে৷ আমার মনে হয়, প্যাটার্নগুলোর পরিবর্তন হয়নি৷ ক্ষমতায় এক সরকার আসবে, সরকার যাবে শুধু এটা হলেই তো হয় না৷

তিনি বলেন,মিডিয়া, মিডিয়া পার্সোনালদের মধ্যে এক ধরনের ভয় থাকে৷ সেই জন্য তারা সেল্ফ-সেন্সর করে৷ আর এর আগে যেটা হয়েছে, মিডিয়া উলঙ্গভাবে সরকারকে সমর্থন করেছে৷ এটা তো কোনো সাংবাদিকতা হতে পারে না৷

তিনি বলেন,আমার মনে হয় আগের ভয়ের অভিজ্ঞতা থেকে তারা পর্যবেক্ষণ করছে৷ তারা  হয়তো একটু দেখে শুনে এগোতে চায়৷

আগে প্রাইভেট টেলিভিশনগুলো সরকার পরিচালিত বিটিভির নিউজ দেখাতে বাধ্য হতো৷ এখন তো সেই বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷

mob justice
লিঞ্চিং, মব জাস্টিস সবখানে হচ্ছে৷ এটা কেন হবে? এটা সংবাদমাধ্যমে আরো ডিটেইল আসা উচিত

বিটিভির নিউজ বর্জন এক কথা, কিন্তু আমি মনে করি বিটিভির একটা নিউজ দেখানো উচিত৷ তারা তো ন্যাশনাল ব্রডকাস্টার৷ এটা বরং দেখালে মানুষ জানতে পারবে, বিটিভি কি দেখায় আর প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কী দেখায়৷ জনগণ বুঝতে পারতো যে পার্থক্যটা কোথায়৷

বিটিভি প্রসঙ্গে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, বিটিভি আমি দেখি না৷ তারপরও আমার মনে হয় না যে, তেমন কোনো পরিবর্তন এসেছে৷ বিটিভি বঙ্গবন্ধু ন্যাশনালাইজ করেন৷ তারপর থেকেই এটা প্রো-পাওয়ার টেলিভিশন৷ সরকারের প্রচার যন্ত্র হিসেবে কাজ করছে৷ যারা যখন সরকারে ছিল, তারাই কেউই চায়নি যে বিটিভি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হোক৷

ভয়ের বিষয় থেকে বেরিয়ে আসতে করনীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারের সিগনাল দেয়ার বিষয় আছে৷ সরকার পেশাদার সাংবাদিকতা উৎসাহিত করবে, সহায়তা করবে৷ আগে কিন্তু চাপের মুখেও কেউ কেউ স্বাধীন সাংবাদিকতা করেছেন৷ আপনারা যেমন করেছেন৷ আপনারা পেরেছেন, কারণ, আপনারা প্রভাবশালী বিদেশি সংবাদমাধ্যমে কাজ করছেন৷ সরকার মিডিয়া পিপলের সঙ্গে যত বেশি ডায়ালগ করবে, আমার মনে হয় সংবাদ মাধ্যম তত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পরবে৷

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের এই আইনটি বাতিল করে দেয়া উচিত৷ আমি ভলতেয়ারের সেই কথাটা বিশ্বাস করি- আমি তোমার মতের সাথে ভিন্নতা পোষন করতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের জন্য আমার কল্লাটা দিয়ে দিতে পারি৷ এটাই সভ্য সমাজের নীতি৷ সরকারের এই ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত৷

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন,আমিও ঢালাও মামলার বিরোধিতা করি৷ এটা বৈষম্য হয়ে গেল না? আপনি বলছেন, আগের চেয়ে ভালো অবস্থার কথা৷ আগেও আমরা ঢালাও মামলা দেখেছি৷ এখনো সেটা হলে তো আর হলো না৷ এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ আমরা মনে হয়, এই সরকার ভিন্নমত প্রকাশে ভয় পায় কিনা৷ ভিন্নমত আসুক না৷ ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে৷

তিনি বলেন, ঢালাওভাবে  দালাল দিালাল সাংবাদিক বলে কোন তালিকা প্রকাশ আমি সমর্থন করি না৷ যে অপরাধী, তাকে আপনি আইনের মাধ্যমে ধরেন৷ ইনফর্মেশন অ্যাডভাইজার বলেছেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত সাংবাদিক, লেখক, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ একজন দায়িত্বশীল মানুষ এভাবে বলতে পারেন না৷ আপনি প্রমাণসহ ধরেন৷এভাবে ঢালাও কথা, ঢালাও মামলা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না৷ তাহলে তো আইনের শাসন হলো না৷
স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা কী করতে পারেন?

সাংবাদিকদের যে কোনো পরিবেশে ডিগনিটি ও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে হবে৷ আর এটা নিয়ে সরকারকে বলতে হবে৷ ডায়ালগ করতে হবে৷ স্বাধীন সাংবাদিকতার দাবি সব সময় জারি রাখতে হবে৷ ডয়চে ভেলে

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button