
সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতের পাশাপাশি ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তার লক্ষ্যে রাজধানীতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ে “নিরাপদ কৃষি পণ্য উৎপাদন, পরিদর্শন, বাজারজাতকরণ ও ভোক্তা পর্যায়ে প্রাপ্তির সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করনীয়” শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ’র (এফআইভিডিবি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সেমিনারে কারিগরী ও আর্থিক সহায়তা করে ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফি।
‘Strengthening smallholder Farms and rural enterprises to better Cope with climate change in the vulnerable haor regions of Bangladesh. স্ট্রেন্থদিং স্মলহোলডার ফার্মস এন্ড রুরাল এন্টারপ্রাইসেস টু বেটার কোপ উইথ ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন দ্যা ভালনারেবল হাওর রিজিওনস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ ক্যাম্পেইনে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) জাকারিয়া।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব, মাহমুদুল কবীর মুরাদ, মো: ওয়াহিদুজ্জামান, ড. মোহাম্মদ মোস্তফা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো: শওকত ওসমান, বিএসটিআই এর পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আহমেদ একরাম উল্লাহ।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ অর্গানিক এগ্রিকালচার নেটওয়ার্ক এর ইনচার্জ ড. মো: নাজিম উদ্দিন।
এসময় তিনি বলেন, নিরাপদ কৃষি পণ্যের উৎপাদন, পরিদর্শন, বাজারজাতকরণ এবং ভোক্তার কাছে পৌছানো একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার, কঠোর পরিদর্শন ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং একটি কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রনয়ণ ও বাস্তবায়ন জরুরি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, ভোক্তার নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। আর সামাজিক সচেতনতার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বিএসটিআই এর পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, খাদ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। আর এই সামাজিক আন্দোলনের জন্য রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা (পলিটিক্যাল এক্টিভিটি) প্রয়োজন। কারণ, আমরা সরকারি কর্মচারি, আমাদের নিজস্ব কোন শক্তি নেই। আইনে যা আছে, তাই করতে হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো: শওকত ওসমান বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সারের বিকল্প নেই। কিন্তু, শুধু জৈব সার দিয়ে পর্যাপ্ত কৃষি পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব নয়। রাসায়নিক সার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে, এ ক্ষেত্রে জৈব সার সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
এসময় তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে অধিদপ্তর। এর জন্যে প্রথম পর্যায়ে ২ কোটি কৃষককে স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে। যার মাধ্যমে বিভাগ ভাগ করে কৃষি পণ্য উৎপাদন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ৮টি পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। জৈব সারের মাধ্যমে কৃষি পণ্য উৎপাদনের মাত্রা বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, শুধু জনসচেতনতা বৃদ্ধি নয়, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে সকল ধরনের কার্যক্রম নিয়েছে কতৃপক্ষ। আমাদের লক্ষ্য- ভোক্তার নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
এসময় তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা খুব একটা সহজ বিষয় নয়। লোকবল সংকটসহ নানা কারণে আমাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে, এই সফলতার জন্য হোটেল-রেস্তোরাসহ খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সকলকে সচেতন ও নৈতিকতা নিয়ে চলতে হবে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, ময়মনসিংহে ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। সেখানে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের কর্মকর্তা রয়েছেন মাত্র একজন। এখন এই একজন মানুষের দ্বারাতো এতো মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। আর এমন পরিস্থিতি সকল জায়গাতেই। তারপরও আমরা এর মধ্য দিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, খাবার উৎপাদনের সাথে জড়িতদের উপযুক্ত জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি। আর এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আমরা অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। যাদের প্রয়োজন, তারা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। তবে, হোটেল কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য হোটেলে মালিকদের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন।
এসময় তিনি বলেন, স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন। আর এই শিক্ষা অর্জনের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে, এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূইয়া বলেন, ক্যাব, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষ, সবাই খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু তারপরও এটা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের কাযক্রম অব্যাহত থাকবে।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্যে এফআইভিডিবি’র প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো: হাসনাইন বলেন, এক ইঞ্চি মাটি উন্নতি (সয়েল ডেভেলপ) হতে একশো থেকে এক হাজার বছর লাগে। কিন্তু (কৃষিতে) কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে সেই শক্তি নিমিষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই মাটির নিরাপত্তার জন্য জৈব সারের বিকল্প নেই।
সেমিনারে এফবিসিসিআই ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধিসহ কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে তাদের মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরেন।
এসআর