আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় পরিদর্শক আরাফাত গ্রেপ্তার
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন গত ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে পরিদর্শক আরাফাত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাব-৩-এর একটি দল তাকে রাজধানীর আফতাবনগর থেকে গ্রেপ্তার করেছে বলে আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো খুদেবার্তায় জানানো হয়।
আশুলিয়ার এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, ২১ পুলিশ সদস্যসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৩৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। তাতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানারাত ইউনিভার্সিটির ইইই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আহনাফ আবীর আশরাফুল্লাহসহ ৪৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে আশুলিয়া থানায় কয়েকজন এসআই লাশ পুড়িয়ে ফেলে।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের এক ভিডিও ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায়, একটি ভ্যানে নিথর দেহ তুলছেন কয়েকজন; গায়ে পুলিশের ভেস্ট ও মাথায় পুলিশের হেলমেট। চাদর ও ব্যানারজাতীয় কিছু দিয়ে দেহগুলো ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার আশুলিয়া থানার সামনের সড়কে ছিল ওই ঘটনাস্থল।
ভিডিওতে দেখা যায়, নিথর দেহ স্তূপ করা ভ্যানটির পাশে কয়েকজন পুলিশ সদস্য হাঁটাহাঁটি করছিল। তাঁদের মধ্যে দুজনের মুখ দেখা গেছে। একজন পুলিশের ভেস্ট পরা, আরেকজন ছিলেন সাদা পোশাকে। পুলিশের ভেস্ট পরা ব্যক্তি হলেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। আর সাদা পোশাকের ব্যক্তির পরিচয় মেলেনি। বাকিরাও ডিবি পুলিশের সদস্য হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৫ আগস্ট সকাল থেকে আশুলিয়া থানা এলাকায় অবস্থান করছিল ঢাকা জেলা উত্তর ডিবি পুলিশের একটি টিম। ওইদিন সকাল থেকেই আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল মোড় এলাকায় জড়ো হতে শুরু করছিলেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের আসার খবরে মসজিদের মাইক ও হ্যান্ড মাইক দিয়ে থানার পুলিশ সদস্যরা আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেন। তার পরও বিক্ষোভকারীরা থানার দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। ওই সময় পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন নিহত হন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই মরদেহগুলোই হয়তো ভ্যানে তোলা হয়েছে।
সেদিনের সেই সংঘর্ষে অন্তত ৩১ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই দিনের ঘটনায় অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ আরও অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ওই দিন তিন পুলিশ সদস্যও নিহত হন। এর মধ্যে দুজনকে হত্যার পর নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইলের একটি ওভারব্রিজের ওপর উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এক পুলিশ সদস্যের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া থানাসংলগ্ন এলাকায় একটি পুলিশ ভ্যানে কয়েকটি পোড়া মরদেহ পাওয়া যায়।
পরদিন সামনে একটি পিকআপে পুড়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি লাশের মধ্যে নিজের ছেলে আস-সাবুরের লাশ চিহ্নিত করেন মা রাহেন জান্নাত ফেরদৌস।