পৃথিবীর কেন্দ্রে লুকিয়ে রয়েছে ভিন্গ্রহ!
ভিন্গ্রহ নিয়ে আমজনতার উৎসাহ কম নয়। বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে আমেরিকার অনেকে তো আবার মহাকাশযানে করে ভিন্গ্রহীরা পৃথিবীতে মাঝেমধ্যেই আসছে বলে দাবি পর্যন্ত করেছেন। তাঁদের কথায়, রাতের আকাশে রহস্যময় উড়ন্ত বস্তু বা আনআইডেনটিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট (ইউএফও) দেখা যাচ্ছে। এই সংক্রান্ত বিশেষ আইন তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে আটলান্টিকের পাড়ের দেশটিতে।
কিন্তু, সত্যিই কি ভিন্গ্রহীদের কোনও অস্তিত্ব রয়েছে? এ ব্যাপারে কী বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা? ভিন্গ্রহ নিয়ে যখন আমজনতার মধ্যে উৎসাহ বাড়ছে, তখনই চাঞ্চল্যকর তত্ত্ব প্রকাশ্যে আনলেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ভূবিজ্ঞানী কিয়ান ইউয়ান। পৃথিবীর মধ্যেই নাকি রয়েছে ভিন্গ্রহের ধ্বংসাবশেষ।
আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় ইউয়ানের তত্ত্ব। তাঁর দাবি, ভিন্গ্রহটির ধ্বংসাবশেষ ভূপৃষ্ঠের উপরে পাওয়া যাবে, এ কথা ভাবলে ভুল হবে। সেগুলি রয়েছে ভূগর্ভের অনেক গভীরে। আরও স্পষ্ট করে বললে, সেগুলির হদিস পেতে নাকি পৌঁছতে হবে পৃথিবীর কেন্দ্রে।
পাশাপাশি, নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে চাঁদের সৃষ্টিরহস্য উল্লেখ করেছেন ভূবিজ্ঞানী ইউয়ান। তাঁর দাবি, পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটি ভিন্গ্রহেরই অংশবিশেষ। কয়েক কোটি বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে ওই গ্রহের ধাক্কার লাগার ফলে জন্ম হয়েছে তার। এই সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ হাতে রয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক।
ইউয়ানের তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে একটি ভিন্গ্রহের সংঘর্ষ হয়। যার আকার ছিল মঙ্গল গ্রহ বা তার থেকে সামান্য বড়। আমেরিকার গবেষক ওই ভিন্গ্রহটিকে ‘থিয়া’ বলে চিহ্নিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ওই সময়ে আজকের তুলনায় আকারে কিছুটা ছোট ছিল পৃথিবী।
এই সংঘর্ষের ফলে সুনির্দিষ্ট একটি কক্ষপথ খুঁজে পায় পৃথিবী। শুধু তাই নয়, ধাক্কার অভিঘাতে প্রাথমিক ভাবে সম্পূর্ণ গ্রহটাই কিছুটা গলিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল। অন্য দিকে, ওই সংঘর্ষে থিয়ার কিছু অংশ ভেঙে গলিত ভূপৃষ্ঠ দিয়ে চলে যায় পৃথিবীর গভীরে। বাকিটা ছিটকে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে শুরু করে। যাকে আজ আমরা চাঁদ বলে জানি।
ইউয়ানের এই তত্ত্ব অবশ্য মানতে রাজি নন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশ। থিয়া নামের কোনও গ্রহের আদৌ অস্তিত্ব ছিল কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তবে এ ক্ষেত্রে মহাকাশ গবেষকরা ভুল করছেন বলে পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন ভূবিজ্ঞানীরা। সে কথা নেচার জার্নালের প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৮০-র দশকে ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করার সময়ে বিজ্ঞানীরা ভূপৃষ্ঠের প্রায় ২ হাজার ৯০০ কিলোমিটার গভীরে দু’টি আলাদা আলাদা সুবিশাল ‘ব্লব’-এর অস্তিত্ব খুঁজে পান। এগুলির এক একটির আকার গোটা একটা মহাদেশের সমান। শুধু তাই নয়, ব্লবগুলির উপরিভাগের পাথরের সঙ্গে পৃথিবীর পাথরের কোনও মিল নেই বলেও জানান বিজ্ঞানীরা।
উল্লেখ্য, এই দুই ব্লবের একটি রয়েছে আফ্রিকার নীচে। অপরটির অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায়। যার হদিস মিলতেই গবেষকদের মনে আসে নতুন প্রশ্ন। প্রথমত, পৃথিবীর উপরি আবরণের এত নীচে গলিত কেন্দ্রের কাছে কী ভাবে পৌঁছল ওই ব্লব? দ্বিতীয়ত, এগুলির শিলার আকার ও প্রকৃতি পৃথক কেন?
ওই সময়ে গবেষক দল আরও দাবি করে যে, রহস্যময় ওই বস্তুগুলি অবশ্যই পৃথিবীর ম্যান্টলে রয়েছে, যা ঘন ঘন অগ্নুৎপাতের কারণ। শুধু তাই নয়, টেকটনিক প্লেট এ দিক-ও দিক সরে গেলেও ওগুলি স্থির অবস্থাতেই রয়েছে। আর তাই ভূপৃষ্ঠে আগ্নেয়গিরি হটস্পট বদলাচ্ছে না।
আর ঠিক তখনই আমেরিকার বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন পৃথিবীর ম্যান্টল অংশে ওই দুই জায়গায় মহাদেশের আকারের দু’টি ব্লব রয়েছে। যা ভিন্গ্রহ থিয়ার অংশ বলে বর্তমানে দাবি করছেন গবেষকেরা। এই নিয়ে স্টকল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ স্টার্লিংয়ের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘‘ইউয়ান ও তাঁর দলের সদস্যরা যে তত্ত্ব তুলে ধরেছেন তা মোটেই ফেলে দেওয়ার নয়। বরং তা অনেক কিছুর সঙ্গেই খাপ খায়।’’আনন্দবাজার পত্রিকা