fbpx
দেশবাংলা

ভাবতেই ভালো লাগে : এই শহরে এখনও কিছু ভাল মানুষ আছে

রোববার রার ১১টায় সিএনজি করে স্ত্রীসহ মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রীর উদ্দেশে রওনা দেই, বনশ্রী আসতে আসতে রাত ১২টা বেজে যায়। তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ নামাতে গিয়ে ভুলবশত আমার হাত থেকে মানিব্যাগটা সিএনজিতেই পড়ে যায়। বাসায় ঢুকে সিড়িতে উঠতে গিয়ে তা খেয়াল করি, গেইট খুলে বের হতে হতে সিএনজি দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়।

মানিব্যাগে বেশকিছু টাকার পাশাপাশি ছিল আমার দুটি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, এনআইডি কার্ড, পিআইডি কার্ডসহ আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। সাধারণত সিএনজিতে কিংবা উবার/পাঠাওয়ে উঠার আগেও আমি গাড়ির নাম্বারপ্লেটটি ভাল করে দেখে তারপর উঠি।

সেরাতে সেটি করা হয়নি, তাই তা ফিরে পাবার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। তারপরও ক্ষীণ আশা নিয়ে আমার ভিজিটিং কার্ডে দেয়া বন্ধ মোবাইল নাম্বারটি রাতেই চালু করি, কিন্তু কোনো কল আর আসেনি। জীবনে প্রথমবার এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়ায় কোনোভাবেই বিষয়টি মানতে পারছিলাম না।

সোমবার দুপুর বেলা বিষন্ন মনেই অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে এলাকার চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে দোকানিকে নিজের এই নির্বুদ্ধিতার গল্প বলছিলাম, ঠিক তখনই একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। রিসিভ করতেই উনি প্রথমে আমার পরিচয় জানতে চায়, আমিও পাল্টা তার পরিচয় জানতে চাইলে জিজ্ঞেস করে আমার নাম আসাদ রিয়েল কিনা? আমি পুলকিত হয়ে বলি ‘হ্যা’!

      boi 1579844549 920x515 11

তারপর তিনি বললেন আমার হারানো মানিব্যাগ পাওয়ার কথা। আমিই সঠিক হকদার কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি আরও কিছু প্রশ্ন জানতে চাইলেন। নিশ্চিত হওয়ার পর আমার ঠিকানায় আসতে চাইলেন ফেরত দিতে, তার অবস্থান আমার কাছাকাছি হওয়ায় আমি নিজেই চলে গেলাম তার কাছে। মানিব্যাগে যা যা ছিল সব সেভাবেই রয়েছে।

তার নাম মো: জিয়াউর রহমান, আমি যে সিএনজিতে করে এসেছিলাম সেটির চালক তিনি। জানালেন রাতে আমাকে নামিয়ে দিয়েই গাড়ি গ্যারেজে ঢুকিয়ে ঘুমাতে চলে যান। সকালে উঠে গাড়ি মুছতে গিয়ে চোখে পড়ে মানিব্যাগটি, সেখানে থাকা আমার এনআইডি কার্ড ও ভিজিটিং কার্ডের মাধ্যমে তিনি আমার মোবাইল নাম্বার খুঁজে পান।

চালক জানালেন, সঠিক ব্যক্তির হাতে তা তুলে দেয়া নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত ছিলেন তিনি। সাথে আরও যোগ করলেন, একসময় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন, বর্তমানে সিএনজি চালিয়ে যে আয়-রোজগার করেন তাতেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া; অন্যায়ভাবে কোনো কিছু উপার্জন বা ভোগ করলে তা সে পথেই চলে যায় বলে তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন।

আমি খুশি হয়ে তাকে কিছু টাকা দিতে চাইলেও তিনি তা নিতে চাচ্ছিলেন না, শেষে তার পরিচিত আরো দুইজন সিএনজি চালকও অনুরোধ করলে জোর করেই তাকে সেটা দেই। পুরো ঘটনার পর আমার বারবার শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে যে ‘এই শহরে এখনও কিছু ভাল মানুষ আছে।’— (বাংলা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার আসাদ রিয়েলের ফেসবুক থেকে নেয়া।)

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button