সর্বজনীন পেনশন উদ্বোধনের পর প্রথম দিনে (বৃহস্পতিবার) অনলাইনের মাধ্যমে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন ১ হাজার ৬৬৬ জন।এবং পেনশন ফান্ডে জমা হয়েছে ৮৭ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ। ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন ১১ হাজারের বেশি গ্রাহক।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্রগুলো বলছে, ‘পেনশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ দেশের লাভজনক বড় বড় অবকাঠামোতে পেনশন তহবিলের টাকা বিনিয়োগ করবে। এতে করে পেনশনাররা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে।
সূত্রে জানা গেছে, পেনশন তহবিলের সঠিক ব্যবহার ও বিনিয়োগে খুব শিগগিরই ‘পেনশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ গঠন করা হবে।
আপাতত শুধু সোনালী ব্যাংকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের হিসাব খোলা হয়েছে। কেউ চাইলে সরাসরি সোনালী ব্যাংকে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন ও চাঁদা দিতে পারবেন। তবে শিগগিরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কম্পিউটার সার্ভিসের দোকানগুলোতেও পেনশন আবেদনের নিবন্ধন ফরম পূরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পেনশন স্কিমে নাম নিবন্ধন করতে পারবেন গ্রাহকরা।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বাস্তবায়নকারী সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা জানান, পেনশন স্কিম নিয়ে যে দেশের নাগরিকরা যে আশাবাদী তা প্রথম দিনের সাড়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে। প্রথমদিন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১ হাজার ৬৬৬ জন গ্রাহক নাম নিবন্ধন করে ৮৭ লাখ টাকার বেশি জমা দিয়েছেন। দ্বিতীয় দিনের হিসাব বের করা হয়নি। মনে হচ্ছে শুক্রবার পর্যন্ত এ ফান্ডের টাকার পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, পেনশন স্কিমে সাধারণ গ্রাহকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন।
তিনি বলেন, টার্গেট গ্রুপকে পেনশনে অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারিভাবে আরও বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শুধু তাই নয়, মানুষ ঘরে বসে যাতে পেনশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে অনলাইন সিস্টেমটি প্রয়োজনে অত্যাধুনিক করা হবে। তবে পুরো বিষয়টির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। নাম নিবন্ধন করে দেশের সাধারণ মানুষ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। পেনশন কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে যে কারো লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সরকার নিজে এর গ্যারান্টার হচ্ছেন। এ ছাড়া পুরো বিষয়টি সরকারিভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ কারণে এটা নিয়ে কারো দ্বিধা বা সংকোচ থাকার কথা নয়।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমরা যে ইউনিক নাম্বার দেব প্রত্যেক পেনশনারকে, তারা কিন্তু ওই নাম্বার দিয়ে সবসময় চেক করতে পারবেন তার অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে। পেনশনারগণ আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরও সুবিধামতো সময়ে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে সরকার সুবিধামতো সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, যে দুটি স্কিম পরে চালু করা হবে, তার মধ্যে রয়েছে শ্রমিক শ্রেণির জন্য একটি, শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যটি। চাঁদাদাতা তার পেনশন আইডি দিয়ে ইউনিভার্সাল পেনশন সিস্টেমে প্রবেশ করে সহজেই বছর শেষে মুনাফাসহ জমা হওয়া টাকার পরিমাণ সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর তার ব্যাংক হিসাবে অথবা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে মাসিক পেনশন দেওয়া হবে।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর। ভবিষ্যতে গড় আয়ু আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতিক লভ্যাংশের আওতায় রয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ কর্মক্ষম। গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে ভবিষ্যতে নির্ভরশীলতার হার বাড়বে। এ কারণে একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, কোনো বৈদেশিক সাহায্য ও কারিগরি সহায়তা ছাড়াই এ ধরনের একটি বড় কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই চারটি স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকে টাকা জমা শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে দেশ বিদেশের বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ভালো সাড়া পড়েছে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে (www.upension.gov.bd) গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সব নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
যেসব প্রবাসীর বাংলাদেশের এনআইডি নেই, তারা বৈধ পাসপোর্টের ভিত্তিতে ব্যাংকিং চ্যানেল, অনুমোদিত মোবাইল আর্থিক পরিষেবা এবং এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিয়ে কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন।
নিবন্ধনের পর একটি নম্বর পাওয়া যাবে, যা দিয়ে চাঁদা পরিশোধসহ সব কাজ করা যাবে। গ্রামীণ পর্যায়ে নিবন্ধন করতে সহযোগিতা করবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। এ কার্যক্রমকে আরও সহজ করতে শিগগির মোবাইল অ্যাপস চালু করবে পেনশন কর্তৃপক্ষ।
অনলাইনে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করলে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হচ্ছে। তবে যারা অনলাইনের মাধ্যমে টাকা জমা দিচ্ছেন কেবল তারাই আপাতত ইউনিক আইডি নম্বর পাচ্ছেন। গ্রাহকদের সুবিধার্থে অনলাইন সিস্টেমটি আরও আপগ্রেড করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টির দিকে নজর রাখছে অর্থবিভাগ।
আবেদনে উল্লিখিত আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা জমা দেওয়ার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। যে কোনো স্কিমে নিবন্ধিত হওয়ার পর পেনশন কর্তৃপক্ষ ধার্যকৃত হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা দেওয়া যাবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে চাঁদা জমা দিতে পারবেন।
পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন একজন গ্রাহক। গ্রাহক মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের ৭৫ বছর বয়স হতে যত বছর বাকি থাকবে, সেই সময় পর্যন্ত নমিনি পেনশন তুলতে পারবেন। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও বিশেষ বিবেচনায় পেনশনভুক্ত হতে পারবেন। তবে আজীবন বা ন্যূনতম ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন সুবিধা পেতে কমপক্ষে একাধারে ১০ বছর নির্দিষ্ট হারে চাঁদা পরিশোধ করতে হবে।