fbpx
আন্তর্জাতিকএশিয়ারাজনীতি

ভারতের সাধারণ নির্বাচনে হেভিওয়েট যারা

ভারতের সাধারণ নির্বাচন শুরু হয়েছে আজ শুক্রবার।দেশের ২২টি রাজ্য আর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে একদিনেই ভোট নেওয়া হয়ে যাবে, তবে উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ আর বিহারের মতো বড় রাজ্যগুলিতে সাত দফায় ভোটগ্রহণ হবে।

বিজেপি, কংগ্রেস,আম আদমি পার্টি আর সিপিআইএম সহ ছয়টি জাতীয় স্তরের স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ছাড়াও আরও কয়েক হাজার প্রার্থী এই নির্বাচনে লড়তে চলেছেন। জাতীয় দলগুলি ছাড়াও ৫৮ টি আঞ্চলিক ভাবে স্বীকৃত দল এবং আরও অনেক ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও ভোটের ময়দানে নেমেছেন।

তবে সবার নজর থাকবে হেভিওয়েট প্রার্থীদের দিকে। প্রথমেই নাম করতে হয় নরেন্দ্র মোদীর।

তিনি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। জনমত সমীক্ষাগুলি জানাচ্ছে তিনিই সম্ভবত ফিরে আসতে চলেছেন। যদি ৭৩ বছর বয়সী নরেন্দ্র মোদী এবারও জিততে পারেন, তাহলে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন।

একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে  মোদীর বড় সমর্থক গোষ্ঠী আছেন, যারা মনে করেন তিনি সুশাসন দিতে পেরেছেন এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের ‘মাথা উঁচু’ করেছেন।

অন্যদিকে তার সমালোচকরা বলেন যে পেশীশক্তির প্রদর্শন করে হিন্দু জাতীয়তাবাদের যে রাজনীতি তিনি করেন, সেখানে সংখ্যালঘুদের কোনও জায়গা নেই আর তিনি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ যে ভাবমূর্তি ছিল, সেটাও নষ্ট করে দিচ্ছেন।

নরেন্দ্র মোদী যেভাবে ধর্ম আর ধর্মীয় প্রতীকগুলিকে ব্যবহার করেন, তা খুবই কার্যকরী হয়, কারণ দেশের ৮০% মানুষই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

এ বছরের নির্বাচনে তার প্রধান স্লোগান হয়ে উঠেছে, “এবার চারশো পার’, অর্থ তার দল সংসদে চারশোটি আসন জেতার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। তবে সংসদের নিম্ন কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য তাদের প্রয়োজন ২৭২টি আসন। গত নির্বাচনে, ২০১৯ সালে দলটি ৩০৩ টি আসনে জয়ী হয়েছিল।

মোদীর লেফটেন্যান্ট শাহ: নরেন্দ্র মোদীর ভোট ব্যবস্থাপনা সামলান তার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। তার নির্বাচনী কৌশল মেনে চলে বিজেপি বহু নির্বাচন জিতেছে।

তার সমর্থকরা বলেন যে তিনি হিন্দু ধর্মকে রক্ষার জন্যই কাজ করেন। তবে কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ সরিয়ে নেওয়া বা নাগরিকত্ব আইনের মতো বিতর্কিত আইনগুলি

প্রণয়নের পিছনেও তারই হাত থেকেছে বলে মনে করা হয়। সমালোচকরা বলে থাকেন দেশের নতুন নাগরিকত্ব আইনটি মুসলিম বিরোধী।

বিজেপির আরও এক হেভিওয়েটের দিকেও নজর থাকবে, যদিও তিনি এই ভোটের প্রার্থী নন।

মুণ্ডিত মস্তক, গেরুয়া বসন পরা সন্ন্যাসী থেকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া যোগী আদিত্যনাথকে মনে করা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরেই বিজেপির সবথেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ।

তিনি এই নির্বাচনে লড়ছেন না ঠিকই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় অন্যতম প্রধান ভূমিকা রয়েছে তারই।

সমর্থকদের কাছে তিনি একজন ধর্মীয় প্রচারক, কিন্তু সমালোচকরা বলে থাকেন যে তিনি বিভাজনের রাজনীতি করেন এবং জনসভায় বক্তৃতা করে মুসলিম-বিরোধী মানসিকতা চাগিয়ে তোলেন।

তার সাত বছরের শাসনামলে মুসলমানদের গণপিটুনি আর ঘৃণাভরা ভাষণ অনেক সময়েই সংবাদ শিরোনামে এসেছে।

বিরোধী পক্ষের ওজনদার যারা: রাহুল গান্ধী কখনও মন্ত্রী হননি, কিন্তু সবচেয়ে পরিচিত বিরোধী নেতা। তবে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের অনেকটাই বংশ পরম্পরায় পাওয়া – দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু থেকে শুরু করে তার ঠাকুমা এবং বাবা দুজনেই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

বিগত এক দশকে বিজেপির যত উত্থান হয়েছে, ততই রাহুল গান্ধীর দল কংগ্রেস ততই ক্ষীণ হয়েছে। তার রাজনৈতিক জীবনের গোড়ার দিকে সমালোচকরা তাকে ’অনিচ্ছুক রাজপুত্র’ বলে আখ্যা দিত।

সেই আখ্যা ঘোচাতে তিনি যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে দেশব্যাপী দুটি পদযাত্রা, যার মাধ্যমে তিনি ‘হিংসা ও দ্বেষের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ’ করার প্রয়াস নিয়েছিলেন।

জনমত সমীক্ষাগুলি অবশ্য কংগ্রেসকে বিজেপির অনেক পিছনে ফেলেছে।

প্রায় এক দশক আগে যখন কংগ্রেস শেষবার সরকারে আসীন ছিল, তখন রাহুল গান্ধীর মা সোনিয়া গান্ধীকে ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারী বলে মনে করা হত।

তবে গত কয়েক বছরে ৭৭ বছর বয়সী মিসেস গান্ধীর যেমন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়েছেন, তেমনই রাজনীতিতে তার প্রভাবও কমেছে।

এবছর জানুয়ারি মাসে মিসেস গান্ধী সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাই এই লোকসভা নির্বাচনে তিনি লড়াই করছেন না।

গান্ধী পরিবারের আরও একটি নাম প্রতি নির্বাচনের আগেই আলোচনায় উঠে আসে। তিনি হলেন মিসেস গান্ধীর কন্যা প্রিয়াঙ্কা। যদিও তিনি কখনও লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হননি।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মতোই অনেকটা দেখতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অবশ্য কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনী প্রচার চালান আর মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কারণে প্রশংসিতও হন। এবারও তার সমর্থকদের মধ্যে থেকেই দাবি উঠেছিল যে তিনি যেন নির্বাচনে দাঁড়ান।

বিরোধী নেতাদের মধ্যে আর যার নাম আলোচনায় রয়েছে, তিনি হলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ

কেজরিওয়াল। তিনি এখন অবশ্য গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন।

তিনি প্রথম প্রচারের আলোয় উঠে এসেছিলেন দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনকারী হিসাবে। তার দল আম আদমি পার্টি বিজেপি আর কংগ্রেসকে হারিয়ে একটানা তিনবার দিল্লির শাসন ক্ষমতায় আছে। আবার পাঞ্জাবেও ওই দলটিই সরকার চালায়।

এবছর মার্চ মাসে আরও কয়েকজন দলীয় সিনিয়র নেতাদের মতো গ্রেফতার হন। দুর্নীতির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলে থাকেন যে তার সরকারের ওপরে প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে। অরবিন্দ  কেজরিওয়ালের সমর্থকদের মনে একটা আশঙ্কা আছে যে তার গ্রেফতারির ফলে দলের প্রচারণায় সমস্যা তৈরি হবে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক। বাংলা টিভি

 

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button