অবশেষে ট্রাম্পের সঙ্গে নিঃশর্ত আলোচনায় রাজি জেলেনস্কি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে হওয়া বাকবিতণ্ডার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে পথে এগোতে চাচ্ছে, সেই পথে এগোতে ইউক্রেন প্রস্তুত আছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার এক্সে এ নিয়ে দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার পর প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। যদিও এ বিষয়টি নিজের পোস্টে উল্লেখ করেননি তিনি। তিনি বলেন, কেউই ‘সীমাহীন’ যুদ্ধ চায় না।
দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার টেবিলে আসতে তিনি প্রস্তুত উল্লেখ করে বলেন, অন্য যে কারোর চেয়ে ইউক্রেনই শান্তি চায় বেশি। তিনি বলেছেন, “যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় হতে পারে বন্দিদের মুক্তি এবং আকাশে মিসাইল, ড্রোন উড়া বন্ধ। সঙ্গে জ্বালানি ও অন্যান্য বেসামরিক অবকাঠামোর উপর হামলা বন্ধ। এছাড়া রাশিয়া যদি মানে সমুদ্রেও যুদ্ধবিরতি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে সব ধরনের সামরিক সহায়তা স্থগিত করার পর মঙ্গলবার এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে দেয়া বিবৃতিতে জেলেনস্কি আরও বলেন, ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে শুক্রবার আমাদের বৈঠক যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো, তা হয়নি। এভাবে ঘটনাটি হওয়াটা দুঃখজনক। এখন সঠিক কাজ করার সময়।
জেলেনস্কি বলেন, আমার টিম ও আমি প্রস্তুত রয়েছি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধীন শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে, যেটা স্থায়ী হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেন যেকোনো সময় এবং যে কোনো শর্তে নিরাপত্তা ও খনিজ চুক্তি করতেও রাজি আছে বলে জানান তিনি।
গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৈঠকের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। ওই বৈঠক শেষে দুই প্রেসিডেন্টের যৌথ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়।
তাছাড়া ইউক্রেনের বিরল খনিজ পদার্থ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও তা আর হয়নি। এই বৈঠকের পর ওই ঘটনার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ক্ষমা চাইতে বলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এরপর ইউক্রেনকে সব ধরনের সামরিক সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
জেলেনস্কি বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা স্থগিতের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পদক্ষেপ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা স্থগিত করা। দৃশ্যত এর মধ্য দিয়ে তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন স্পষ্ট হয়েছে এবং এতে মস্কোর পক্ষে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা ও যোগাযোগ রাখতে আগ্রহী কিয়েভ। তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য আমেরিকা যেভাবে ভূমিকা রেখেছে, তা সত্যিকারে আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। তিনি আরও বলেন, আমাদের কেউ একটি নিরন্তর যুদ্ধ চাই না। শান্তি প্রতিষ্ঠায় যত দ্রুত সম্ভব সমঝোতার টেবিলে বসতে ইউক্রেন প্রস্তুত রয়েছে। ইউক্রেনিয়ানরা শান্তির জন্য যতটা মুখিয়ে আছেন, তার চেয়ে বেশি অন্য কেউ নন।



