১৭ মার্চ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের এই দিনে, টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ পরিবারের আদরের ‘খোকা’। যিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির ‘মুজিব ভাই’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু’।
তাঁর হাত ধরেই আসে বাঙালির স্বাধীনতা, জন্ম নেয় বাংলাদেশ। দুঃখজনকভাবে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি। আজ শততম জন্মদিনে তাঁর প্রতি বাংলা টিভির বিনম্র শ্রদ্ধা।
১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা। বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুন। চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিব ছিলেন তৃতীয়। ডাকনাম ছিল ‘খোকা’।
শৈশব থেকেই তিনি মানুষের প্রতি যেমন ছিলেন উদার, পরাধীনতার হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে তেমনি ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। কিশোর বয়সেই সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ায় প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন।
এরপর থেকে শুরু হয় আজীবন সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা। দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন।
১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
তাঁর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে শত বছরের নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি।১৯৭১ এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা, মুক্তির অদম্য স্পৃহায় বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে।
১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। তার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
‘যদি রাত পোহালেই শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই…’ গানটির আকুতির মতোই যদি সত্যিই বঙ্গবন্ধু মারা না যেতেন, তাহলে আজ শতবর্ষী হতেন তিনি। জনতার নেতা মুজিব না থাকলেও, তাঁর আদর্শ ও অনুপ্রেরণা বাঙালির মননে গেঁথে আছে। শ্রদ্ধা-ভালোবাসায়, কৃতজ্ঞচিত্তে আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করছে বাঙালি।
আসাদ রিয়েল, বাংলা টিভি