পর্যটক শুন্য সুন্দরবনে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে জীব বৈচিত্র্য ও প্রাণীকুল, বাঘ-হরিণ ও কুমির সহ ভয়ংকর প্রাণীদের বিচরন ভিন্ন আমেজ বইছে। প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য ও প্রাণীকুল। করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে দেশী-বিদেশী পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আনাগোনা বন্ধ থাকায় প্রকৃতির এ বনের প্রাণীজগতে বিরাজ করছে প্রফুল্লতা।
ভিন্ন আমেজ ও সজীবতায় ফিরেছে বনের বৃক্ষলতা আর কোলাহল মুখরিত হয়ে উঠেছে ম্যানগ্রোভ এ বনের প্রাণীরা। নদী ও খালের চরাঞ্চলে দেখা মিলছে হরেকরকম বণ্যপ্রানীর।
বঙ্গোপসাগারের উপকুলবর্তী ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তের এ বন প্রায় ৪শ ৫০টি নদী-খালে বেষ্ঠিত। এ বনে সুন্দরী, গোওয়া, গরান ও কোওড়া সহ ৩শ ৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। রয়েছে স্বনামে খ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমির ও বানর।
বনবিভাগের তথ্য মতে, ২শ ৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপ্রায়ী প্রানী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮টি উভয়চর প্রজাতির আবাসস্থল এবং নদী-খালে রয়েছে কাঁড়া ও শামুক সহ ১শ ২০ প্রজাতির মাছ। ঘুর্নিঝড়, জলোচ্ছ¦াস ও প্রাকৃতিক নানা দূযোর্গ মোকাবেলা করে টিকে আছে পৃথিবীর একক ম্যানগোভ বন সুন্দরবন।
এ ছাড়া রয়েছে বনের প্রকৃতি ও প্রাণীকুলের ওপর রয়েছে মানুষের নিষ্ঠুর আচরন। নিয়ম নীতি না মেনে বনের অভ্যন্তরে পর্যটক, পেশাজীবী সহ বৈধ ও অবৈধ প্রবেশকারীদের পদচারনা, বৃক্ষ নিধন ও বন্যপ্রানী হত্যা-পাচার সহ নানা কারেন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সুন্দরনের জীববৈচিত্র্য। এতো দিন সরকারি-বেসকারি নানামুখী তৎপরতা ও উদ্যোগ নেয়া হলেও মানুষের এমন নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পায়নি প্রাকৃতিক পরিবেশ।
১ থেকে ৩ জন, বন সংলগ্ন বাসিন্দা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারী ধারন করায় গত ১৯ মার্চ থেকে লডডাউন করা হয় সুন্দরবন। আর এ কারনে সুন্দরবনের দর্শনীয় স্পট ও অভ্যন্তরে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়। টানা একমাস ধরে পর্যটক শুন্য এ বনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। এতোদিন মানুষের কারেন যে সকল প্রাণীর অহরহ দেখা মিলতো না। সেই সকল প্রাণীদের ছুটা ছুটি ও কোলাহল এখন চোখে পড়ার মতো।
নদী-খালের চরাঞ্চলে নির্ভয়ে বিচরন করছে হরিন-বানর ও বণ্য শুকর। শিকারের সন্ধানে ছুটে চলছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বিষাক্ত সাপ, কাঁকড়া ও হরেক রকম পাখির আনাগোনাও বেড়েছে। নদীর বাঁকে শিকারের অপেক্ষায় ওৎ পেতে আছে নোনা জলের রাক্ষুসে কুমির। গাছে-তরুলতায় ফুল ফুঁটেছে, জানান দিচ্ছে মধু মাসের। মানব সভ্যতার কোলাাহল থেকে আড়ালে থাকা ম্যানগ্রোভ বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন ভিন্ন রুপে সেছেছে।
আর প্রাণী জগতের মধ্যেও যেন বইছে প্রকৃতির আমেজ। নদীর মোহনায় দেখা মিলছে শুশুক ও ইরাবতি ডলফিনের বিচরন। সুন্দরবনের প্রাণীকুলে ভিন্নরকম উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে প্রজনন কেন্দ্র সহ বণ্যপ্রানীর মধ্যে করোনার সংক্রমন রোধে সর্তকতামূলক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
পরিকল্পিত সহনশীল পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠলে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রাণীকুল-জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণীকুলের এ সজীতা ধরে রাখতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।