fbpx
বাংলাদেশঅপরাধ

যেভাবে হত্যা করা হয় এমপি আনোয়ারুল আজীমকে

হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকার চুক্তি

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আজীমের ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান শাহীন। ভারতের কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয় আনোয়ারুল আজীম আনারকে।  বাংলাদেশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এসব তথ্য দিয়েছে।

সূত্রটির দাবি, আনোয়ারুল আজীম ও আক্তারুজ্জামান শাহীনের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার তথ্য রয়েছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে। দুজনের মধ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে বলে তদন্তকারীরা ধারণা করছেন। এ ছাড়া এমপি আনোয়ারুল আজিম ভারতে গিয়ে যে বন্ধুর বাসায় উঠেছিলেন, সেই গোপাল বিশ্বাসও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত।

পশ্চিমবঙ্গের সিআইডির মহাপরিদর্শক (আইজি) অখিলেশ চতুর্বেদীর কাছে এ প্রতিবেদক জানতে চেয়েছিলেন, যার বাসায় এমপি আনোয়ারুল প্রথম উঠেছিলেন; তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া গেল কিনা। অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘গোপাল বিশ্বাসকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। তিনি আমাদের নজরবন্দি রয়েছেন। আমরা আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’

Shahin
আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আজীমের ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান শাহীন

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওয়ারী বিভাগ আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে বলে জানা গেছে। ডিবির একটি সূত্র বলেছে, আক্তারুজ্জামান শাহীন এ হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেন তার বন্ধু ও চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমানকে। কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে বাংলাদেশে চলে আসেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। পরে আমানসহ ছয়জন মিলে এমপি আজীমকে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ফেলে দেয়। তবে, কোথায় ফেলে দেওয়া হয়েছে, তা এখনও জানাতে পারেনি সূত্রটি।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ার অভিযোগে চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানসহ তিনজন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সবাই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। কলকাতায় এমপি আনোয়ারুলকে হত্যার পর তারা দেশে চলে আসেন। মূলত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে বাংলাদেশের পুলিশ ও ভারতের পুলিশ বাকি জড়িতদের ধরতে কাজ করছে।

Dorin in Thana
এ ঘটনায় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন

এ ঘটনায় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। কলকাতার পুলিশ মরদেহের টুকরো বহনকারী এক প্রাইভেটকার চালককে আটক করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

ডিবির সূত্রটি নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে সূত্রটি বলেছে, গত ৩০ এপ্রিল আক্তারুজ্জামান শাহীন চরমপন্থি নেতা আমান ও সিলিস্তা রহমান নামে নিজের এক বান্ধবীকে নিয়ে কলকাতা যান। সেখানে আগে থেকে ভাড়া করে রাখা নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা। কলকাতায় আরও আগে থেকেই অবস্থান করছিল শাহীনের আরও দুই সহযোগী সিয়াম ও জিহাদ। সেখানে বসে তারা সবাই এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরে হত্যার পুরো দায়িত্ব আমানকে বুঝিয়ে দিয়ে ১০ মে দেশে চলে আসেন শাহীন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমান বাংলাদেশ থেকে আরও দুই ভাড়াটে খুনীকে নিয়ে যায় কলকাতায়। ফয়সাল শাজী ও মোস্তাফিজ নামে এই দুইজন ১১ মে কলকাতায় গিয়ে আমানের সঙ্গে যোগ দেয়।

আমানকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার গত ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় যান। প্রথমদিন তিনি তার বন্ধু গোপালের বাসায় থাকেন। পরদিন ১৩ মে কৌশলে এমপি আনারকে ডেকে নিয়ে নিউটাউনের সেই ফ্ল্যাটে যায় হত্যাকারীরা। এ সময় তারা এমপির কাছে আক্তারুজ্জামান শাহীনের পাওনা টাকা পরিশোধের বিষয়ে কথা বলেন। এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সবাই মিলে এমপি আনোয়ারুল আনারকে জাপটে ধরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর আমান বিষয়টি শাহীনকে জানায়। তারপর মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। পরে মরদেহের টুকরো ব্যাগে ভরে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়।

Silisti rahman
৩০ এপ্রিল আক্তারুজ্জামান শাহীন চরমপন্থি নেতা আমান ও সিলিস্তা রহমান নামে নিজের এক বান্ধবীকে নিয়ে কলকাতা যান

ডিবি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আমান বলেছে, এমপি আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার চুক্তি করে আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে তাকে কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল হত্যাকাণ্ডের পর। তাদের মিশন সফল হওয়ার পর আনারের মরদেহের টুকরোগুলো গুম করার জন্য সিয়াম ও জিহাদকে দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আমান। ঢাকায় এসে দেখা করেন আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে। তবে আক্তারুজ্জামান শাহীন পরবর্তীতে তাকে কত টাকা দিয়েছে, এর কোনো উত্তর দেননি তিনি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, হত্যার পর দেশে ফিরে ঢাকায় আসেন আমান। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বোনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই তাকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা সাজিয়ে ১০ মে ঢাকায় চলে আসেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। এমপি আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়টি দেশে আলোচিত হলে তিনি ১৮ মে আবারও ভারত হয়ে নেপালে চলে যান। ২১ মে নেপাল থেকে চলে যান দুবাই। ২২ মে দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি।

বাংলা টিভি / এমএএইচ

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button