fbpx
অন্যান্যবাংলাদেশ

‘শাস্তির ভয় দেখিয়ে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না’

রাজেকুজ্জামান রতন : সড়ক পরিবহণ আইন প্রয়োগ শুরু হতে না হতেই দেশের নানা স্থানে পরিবহণ শ্রমিকদের বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার মত ঘটনাও ঘটছে। প্রথম দিনে ৮৮ টি মামলা ও কয়েক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করার খবর এসেছে।

বিআরটিএ আইনের যে ধারাগুলোতে শাস্তির বিধান আছে সেগুলোকে আলাদা করে প্রচারের উদ্যোগ নেয়াতে পরিবহণ শ্রমিকদের মধ্যে শাস্তির ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বেশ ভালভাবেই।

আমরা সবাই জানি যেকোনো আইনের প্রধান লক্ষ্য থাকে সর্বাধিক মানুষের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করা। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, শাস্তির ভয় দেখিয়ে আর যাই হোক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না। তাই যদি হতো তাহলে এতো জেলখানা, কঠিন শাস্তি ও কারাদণ্ডের বিধান থাকা সত্ত্বেও অপরাধ কমে না কেন?

সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ প্রদান, অপরাধ সংশোধনের উদ্যোগ এবং শাস্তি প্রদান এসব কিছুর সম্মিলিত প্রভাবেই শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু অন্য সব উদ্যোগ সম্পন্ন না করেই শাস্তির লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করলে তা কখনোই সড়কে শৃঙ্খলা আনবে না। তাই আইন যেন আতঙ্কের কারণ না হয় সে ব্যাপারে যতবান হওয়া প্রয়োজন।

সড়ক পরিবহন এমন একটি সমন্বিত খাত যেখানে সরকার, মালিক, শ্রমিক, যাত্রী সবার অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব পালন প্রয়োজন। ট্রাফিক ও বিআরটিএর দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা এবং মালিকদের মুনাফার লোভে চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানোর শাস্তির ব্যবস্থা না করে শ্রমিকদের জন্য জেল,  জরিমানা পয়েন্ট কাটা এবং সব দায় পরিবহণ শ্রমিকদের উপর চাপানোর মানসিকতা থেকে আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ করতে গেলে তা সড়কের শৃঙ্খলা কতোটুকু প্রতিষ্ঠা করবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।

                    75594510 2580123965433969 2224749362330730496 n 37

সড়ক দুর্ঘটনা যখন আমরা বলি তখন একথা প্রথমেই স্বীকার করে নেয়া হয় যে, এটি একটি দুর্ঘটনা। কি কি কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলেই দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি বিধান বা ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা এড়ানোর পথ বের করা সম্ভব হবে। দুর্ঘটনাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা এবং শাস্তির লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করা হলে তাতে সড়কে স্বস্তি বা শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হবে না।

অপরাধীরা যেকোনো অপরাধ করতে হলে পরিকল্পনামাফিক করে, কিন্তু দুর্ঘটনার কি কোনো পরিকল্পনা থাকে? তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শাস্তির বিধান করতে আইন যা করা হলো তাতে দুর্ঘটনাকে আসলে অপরাধ হিসেবেই চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সে কারণেই দেখা যাচ্ছে যে, ১২৬ ধারা সংবলিত সড়ক পরিবহন আইনে ৫১টি ধারা প্রবর্তন করা হয়েছে যেখানে শাস্তির বিধান আছে। একাদশ অধ্যায়ে আছে অপরাধ, বিচার ও দণ্ড।

এই অধ্যায়ে ৪১টি ধারা আছে আর ত্রয়োদশ অধ্যায়ে অপরাধ, পুলিশের ক্ষমতা এখানে ধারা আছে ১০টি। অর্থাৎ ৫১টি ধারা সরাসরি শাস্তি সম্পর্কিত। এর বাইরেও আরও কিছু ধারা আছে যা দিয়ে শাস্তি দেয়া যেতে পারে। একথা মনে রাখা দরকার আইন এবং ফাইন করে যেমন শৃঙ্খলা আনা যায় না তেমনি শাস্তির ভয় দেখিয়ে স্বস্তি আনা যায় না।

৫০ লাখ পরিবহন শ্রমিককে প্রতিপক্ষ বানিয়ে বা তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের কাছ থেকে সেবা পাওয়া কী সম্ভব? মালিকের চাপ, যাত্রীর উপেক্ষা আর পুলিশের হয়রানির ভয় নিয়ে কি সুস্থভাবে গাড়ি চালানো সম্ভব? একটি গাড়ি যখন ৬০ কিলোমিটার বেগে চলে তখন প্রতি সেকেন্ডে ৫০ ফুট দূরত্ব অতিক্রম করে।

ফলে মুহূর্তের অসতর্কতা ভয়ংকর দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। গাড়ি চালনা এমন একটি বিষয় যেখানে সমস্ত ইন্দ্রিয় প্রতিমুহূর্তে সজাগ রাখতে হয়। চালকদের ক্ষেত্রে সেই সহযোগিতার মনোভাব না থাকলে নিরাপদ যাত্রা সম্ভব হবে কী?

শ্রমিকদের অবদান ও তাদের অসহায়ত্ব যেন বিবেচনায় রাখা হয়। জীবিকার দায়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় আসা শ্রমিকদের উপর এমন কোনো শাস্তির বিধান যেন করা না হয় যার ভার বহন করা শ্রমিকদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ঈষৎ সংশোধিত। (বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতনের টাইম লাইন থেকে নেয়া )

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button