fbpx
আন্তর্জাতিকইউরোপএশিয়া

চীন সম্পর্কে ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন: পাল্টে দিতে পারে অনেক হিসাব

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইউরোপ সফর করেছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যেই এই সফর।

পশ্চিমা মিডিয়াগুলো চীনের কূটনৈতিক তৎপরতাকে ‘কূটনৈতিক পারমাণবিক বিস্ফোরণ’ নামে অভিহিত করেছে যা কিনা পশ্চিমের সাধারণ জনগণের অন্যতম আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা চীনের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরাট প্রভাব বলে মনে করছেন অনেকে।

পশ্চিমা জনমনে এখন যে মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে তা ঠিক ১৯৭২ সালের ঘটনার অনরূপ। কেননা ওই বছরে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন চীন সফর করেছিলেন। সেই সময়ে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট চার্লস দে গল বলেছিলেন যে ফ্রান্সের উচিত সরাসরি চীনের কথা শোনা এবং যে সরকারগুলো দোদুল্যমান আছে তারা এখনই বা আরো পরে গিয়ে চীনের ব্যাপারে প্যারিসকে অনুসরণ করবে।

পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের মতে, বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় পরিবর্তন চীনকে তার স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করতে প্ররোচিত করেছে।

যেহেতু আমেরিকার সাথে চীনের দ্বন্দ্ব অনিবার্য এবং মস্কোর সাথে বেইজিংয়ের সম্পর্ক ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছে, তাই ইউরোপ আগামীর বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। এই উদ্দেশ্যে, চীন ইউরোপের সাথে মুক্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় এবং এই মহাদেশের সাথে যোগাযোগের জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট তিনটি ইউরোপীয় দেশ সফর শুরু করেছেন যাদের বর্তমানে বেইজিংয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এই তিনটি দেশ হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফ্রান্স ও হাঙ্গেরি এবং ইউনিয়নের বাইরে সার্বিয়া।

চীনা প্রেসিডেন্ট প্রথমে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন। এটি এমন একটি দেশ যে ইউক্রেন যুদ্ধের পরও শস্য বিনিময়ের মাধ্যমে বেইজিংয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

যদিও ঐতিহ্যগতভাবে চীনের সাথে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী ছিল জার্মানি। কিন্তু, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বার্লিনের সাথে বেইজিং এর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কারণ জার্মানির পররাষ্ট্র নীতি এখন নব্য রক্ষণশীলদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক বেশ দুর্বল। তবে, জার্মানির শিল্প সমিতি সরকারের চীন বিরোধী নীতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

এদিকে, মার্কিন-সমর্থিত থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলো চীনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন কোরে এমন সব গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যা বেইজিংয়ের সাথে বার্লিনের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

শি জিনপিংয়ের ইউরোপ সফরের দ্বিতীয় গন্তব্য ছিল সার্বিয়া। যদিও সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ নয় কিন্তু এ দেশটি বলকান অঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী দেশ যার বিরুদ্ধে ১৯৯০ এর দশকে ন্যাটোর ব্যাপক বোমা হামলার কারণে পশ্চিমের সাথে সার্বিয়ার শীতল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। অন্যদিকে, সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান এবং কসোভোর সার্বভৌমত্বের ইস্যুতে বেশ চাপের মুখে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সার্বিয়ার সমৃদ্ধি ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব নিশ্চিত করতে রাশিয়া ও চীনের মতো তৃতীয় শক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী।

চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের তৃতীয় গন্তব্য ছিল হাঙ্গেরি। ‘ভিক্টর অরবান’ এর নেতৃত্বাধীন এ দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে চীনেরর শক্ত সমর্থক হিসাবে পরিচিত। অরবান চীন ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক রেখে তার পররাষ্ট্রনীতি প্রসারিত করেছেন। বুদাপেস্ট বেইজিংয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার; কেননা হাঙ্গেরি ইউরোপ মহাদেশে চীনা বিনিয়োগের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করছে।

অন্যদিকে, মধ্য ইউরোপে এবং বলকানের উপরে হাঙ্গেরির একটি বিশেষ ভূ-কৌশলগত অবস্থান রয়েছে। কারণ চীনের অর্থনৈতিক করিডোরগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘পায়ানা’ যা কিনা গ্রীসের ‘পাইরাস’ বন্দর থেকে শুরু হয়েছে এবং এটি গ্রীস, হাঙ্গেরি, সার্বিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক। বাংলা টিভি

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button