fbpx
বাংলাদেশঅপরাধ

‘গার্লফ্রেন্ড’ শিলাস্তি ফেরার পর ঢাকা ছাড়েন শাহিন

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। কলকাতার একটি ফ্ল্যাটের ভেতরে তার হত্যা করার পর কয়েক টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়া হল। হত্যাকাণ্ডের সেই রোমহর্ষক ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, এই ভয়াবহ ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন আখতারুজ্জামান শাহিন। হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের পরই বাংলাদেশ ছাড়েন তিনি। এখন পলাতক হিসাবেই তার নাম রয়েছে পুলিশের খাতায়। 

এমপি আনার খুনের সঙ্গে রহস্যময়ী এক তরুণী নাম উঠে এসেছে। শিলাস্তি রহমান তার নাম। এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে শিলাস্তিতে ব্যবহার করা হয়েছে হানি ট্রাপ হিসেবে। অর্থাৎ, শিলাস্তির ডাকে সাড়া দিতেই এমপি আনার ছুটে যান কলকাতায়। চিকিৎসার নাম করে বাড়ি ছাড়েন এই সংসদ সদস্য। 

গত ১২ মে ভারতের কলকাতায় যাওয়ার পর দিন ১৩ মে থেকে রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে যান আনার। এরপর ২২ মে সকালের দিকে তার খুনের খবর সামনে আসে। কলকাতার কাছেই নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে এমপি আনারকে খুন করা হয়।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় যান এমপি আনার। প্রথম দিন তিনি তার বন্ধু গোপালের বাসায় থাকেন। পরদিন কৌশলে এমপি আনারকে নিউটাউনের সেই ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যায় হত্যাকারীর। আর এই কাজটি করেন শিলাস্তি, তিনি ফোনে এমপি আনারকে নেমন্তন্ন জানান দেখা করার। 

মূল পরিকল্পনাকারী শাহিন সংসদ সদস্য আনারকে কলকাতা নিতে এই তরুণীকেই ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কারণ, সব পরিকল্পনা করে শাহিন ১০ মে দেশে ফিরে এলেও শিলাস্তি রহমান থেকে যান কলকাতায়। ধারণা করা হচ্ছে, শিলাস্তির সঙ্গে এমপি আনারের আগে থেকেই পরিচয় ছিলো। 

শিলাস্তির ডাক পেয়েই বন্ধু গোপালকে চিকিৎসা ও খানাপিনার অজুহাতে কলকাতার নিউটাউনে চলে যান এমপি আনার। সেখান শিলাস্তিসহ আরও একজনকে নিয়ে সেই ফ্ল্যাটে যান আনার। গোয়েন্দাদের ধারণা, সাথের ব্যক্তিটিই এমপি আনারের কন্ট্রাক্ট কিলার আমানুল্লাহ ওরফে আমান। 

কলকাতার সূত্র জানায়, যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে, ১৩ মে সেখানে দুজন পুরুষ ও একজন নারী প্রবেশ করেন। একদিন থাকার পর ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে আসেন এক পুরুষ ও এক নারী। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীই শিলাস্তি রহমান। ১৩ মে তিনি আমানুল্লাহ ও আনারের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকে থাকতে পারেন।

অভিযুক্ত খুনি আর মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহিনের গার্লফ্রেন্ড শিলাস্তি রহমান ডিবির হাতে আটক রয়েছে। তাদের থেকেই হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনা জানা গেছে বলে জানান হারুন অর রশীদ। শিলাস্তি ঢাকায় ফেরত আসার পরই, শাহীন নেপালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যান। 

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৩ মে এমপি আনারকে হত্যার পর শাহিনের গার্লফ্রেন্ড শিলাস্তি ও আমানুল্লাহ ১৫ মে এবং মোস্তাফিজ ১৬ তারিখ ঢাকায় ফেরেন। এরপরেই ভিস্তা এয়ারলাইন্সে করে শাহীন দিল্লি হয়ে কাঠমাণ্ডুতে চলে যান। বর্তমানে তিনি পলাতক আছেন।

সংসদ সদস্য আনারকে ঢাকায় বসে ২-৩ মাস আগে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঢাকায় না পেরে কৌশলে নেয়া হয় কলকাতায়। সেখানে তাকে হত্যার পর শরীর টুকরো টুকরো করে হাড্ডি ও মাংস আলাদা করা হয়। এরপর হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ভরে ওই বাসা থেকে বের করা হয়েছে। 

গোয়েন্দারা জানান, হত্যাকাণ্ডের সময় শিলাস্তি ফ্ল্যাটের অন্যতলায় অবস্থান করছিলেন। তবে সামনে ছিলেন না। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি নিচে নেমে আসেন। এরপর লাশ গুমে সহায়তা করেন। আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি মিলেই এমপি আনারের টুকরো করা লাশ একটি ট্রলিতে নিয়ে প্রথমে বের হয়েছিলেন বলে তথ্য রয়েছে।

 

বাংলা টিভি / এমএএইচ

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button