fbpx
আন্তর্জাতিকমধ্যপ্রাচ্যযুক্তরাষ্ট্র

গাজায় পারমাণবিক হামলার বিপজ্জনক চিন্তা

আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুমুমি কিনকাওয়া জাপানি সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের তুলনা করার প্রবণতার সমালোচনা করে বলেছেন, গাজায় পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের হুমকি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তুমুমি কিনকাওয়া একজন গবেষক এবং মানবাধিকার কর্মী। তিনি পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভূত। বর্তমানে তিনি সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।

এই আন্তর্জাতিক গবেষক ‘কাউন্টারপাঞ্চ’ ওয়েবসাইটে লিখেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণের গণহত্যাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ ইহুদিবাদী রাজনীতিবিদরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি ও জাপানের বিমান হামলা এবং হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। দখলদার ইসরাইলের প্রতি অব্যাহত নিঃশর্ত মার্কিন সামরিক সহায়তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ বেড়ে যাওয়ার একই সময়ে মার্কিন আইনপ্রণেতারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি গণহত্যাকে ন্যায্যতা দিতে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ করাকে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত হিসেবে তুলে ধরতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে পরমাণু বোমা হামলার প্রসঙ্গ টানছেন। উদাহরণ হিসেবে এই গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের কংগ্রেস সদস্য টিম ওয়ালবার্গের মন্তব্য তুলে ধরেছেন। আমেরিকার ঐ আইনপ্রণেতা ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন। এ জন্য তিনি অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির মতো বোমা ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন।

‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা-নাগাসাকিতে আণবিক বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর জেরে জাপানের আত্মসমর্পণ ত্বরান্বিত হয়। চূড়ান্ত জয় পায় মার্কিন জোট।’ মিশিগানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য টিম ওয়ালবার্গ। গত ২৫ মার্চ নিজের নির্বাচনী এলাকার একটি টাউন হলে ভোটারদের সামনে দেওয়া ভাষণে এমন মন্তব্য করেছিলেন তিনি। জাপানের শহর দুটিতে মার্কিন বাহিনীর আণবিক বোমা ফেলার প্রসঙ্গ টেনে টিম ওয়ালবার্গ গাজায় একই পন্থা অবলম্বনের কথা বলেন। সেই সঙ্গে গাজায় মার্কিন সহায়তা বন্ধ করারও আহ্বান জানান তিনি। গাজাবাসীকে মানবিক সহায়তা দিতে মার্কিন প্রশাসনের ডলার খরচ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনপ্রণেতা। টিম ওয়ালবার্গ বলেন, ‘আমার মনে হয়, গাজাবাসীর জন্য আমাদের একটি অর্থও খরচ করা উচিত হবে না।’ মার্কিন এই আইনপ্রণেতা আরও বলেন, নাগাসাকি আর হিরোশিমার মতো করা দরকার। তাহলে দ্রুত এই যুদ্ধ শেষ হবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের দু’টি বড় শহরে পারমাণবিক বোমাবর্ষণের ঘটনাকে বারবার সামনে আনার প্রবণতা একটি বিপজ্জনক বিষয়, সেটা যে দলের পক্ষ থেকেই উত্থাপিত হোক না কেন। রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার এ ধরণের প্রকাশ্য বিবৃতি মার্কিন রাজনীতিবিদদের বিপজ্জনক চেতনারই প্রতিফলন। জাপানি সাম্রাজ্যবাদ এবং ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের মধ্যে ভিত্তিহীন তুলনাকে উচ্চস্বরে নিন্দা জানিয়ে তা জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করা উচিৎ। এর কারণ হলো, ইহুদিবাদী ও শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ব্যাপক গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞকে ন্যায্য হিসেবে প্রমাণ করতে এ ধরণের নানা প্রসঙ্গ সামনে আনছে।

আন্তর্জাতিক আইন ও বিধিমালাতেই ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণী লক্ষ্য অর্জনের জন্য সশস্ত্র প্রতিরোধের অধিকার দেওয়া হয়েছে। ইহুদিবাদী ও বর্ণবাদীরা ভুলভাবে ফিলিস্তিনের ঔপনিবেশিকতা বিরোধী মুক্তি আন্দোলনকে ‘ধর্মীয় গোঁড়ামি’ হিসেবে অভিহিত করছে। একই সময়ে তারা জাপানের ঘটনার মিথ্যা বিশ্লেষণ উপস্থাপন এবং হলোকাস্টকে অপব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নির্মম গণহত্যাকে জায়েজ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।

বিশ্বের মানুষ বোঝে যে, জাপান সাম্রাজ্য ১৯ শতক থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষদের জন্য একটা ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল। সেটার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক নেই। জাপানের মানুষ এখন রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং সভ্য। আজ জাপানি জনগণও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে। এই একাত্মতার অর্থ তাদের পূর্বের সাম্রাজ্যবাদী চেতনাকে প্রত্যাখ্যান।  একই সঙ্গে তারা এই একাত্মতার মাধ্যমে আজকের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং ইউরোপীয় উপনিবেশবাদকে প্রত্যাখ্যান করছে।

ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করা এবং গাজাসহ গোটা ফিলিস্তিনে আগ্রাসন বন্ধে চেষ্টা চালানো আমাদের সবার দায়িত্ব। মার্কিন আধিপত্যবাদী ব্যবস্থার সমর্থনে ও জাপানের মতো বিভিন্ন সরকারের সহযোগিতায় দখলদার ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করেছে এবং ফিলিস্তিনের ঔপনিবেশিকতা বিরোধী স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোকে আক্রমণ করেছে। দুর্ভাগ্যবশত জাপান সরকার আবারও ভুল পথটিই বেছে নিয়েছে, যেমনটি জাপানের তৎকালীন সরকার গত শতাব্দীতে করেছিল। কিন্তু এটি জাপানি জনগণের অবস্থান নয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বিশ্লেষণের পাশাপাশি এ কথাও বলতে হবে যে, একজন নিরপরাধ মানুষ হত্যাও মারাত্মক অপরাধ, কোনোভাবেই নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ন্যায্য হতে পারে না। জাপানের নিরীহ জনগণের ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ না করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলতেই থাকত এবং আরো মানুষ নিহত হতো বলে আমেরিকা যে প্রতারণামূলক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে তা কোনো বিবেকবান মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমন বক্তব্য কেবল মানবতার দুশমনদের কাছ থেকেই আসতে পারে।পার্সটুডে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক। বাংলা টিভি

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button