আমেরিকায় প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিন্ন অবস্থানে দুই দল; ফায়দা লুটতে পারেন ট্রাম্প
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-ছাত্রী এবং অধ্যাপকেরা যখন গাজার মানুষের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন তখন দেশটির উভয় দলের রাজনীতিবিদরা পুরানো নির্বাচনী কৌশল অনুসরণের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনের তরী পার হওয়ার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন।
১৯৬৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টি তথা রক্ষণশীলরা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ সেদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বাকপটুতার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। সে সময়ও মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-ছাত্রীরা ভিয়েতনামে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছিল। তারা যুদ্ধ বন্ধের দাবি তুলেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ আন্দোলনকে ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান উভয় দলই দেশবিরোধী অবৈধ তৎপরতা হিসেবে অভিহিত করেছিল। দীর্ঘ ৫৬ বছর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুরূপ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আমেরিকা জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনিপন্থী তাঁবুতে অভিযান চালানোর জন্য যখন পুলিশকে ডাকা হলো তখনি বিজ্ঞজনদের মনে অর্ধ শতাব্দী আগের ইতিহাস উকি দিতে শুরু করে।
১৯৬৮ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী রিচার্ড নিক্সন তৎকালীন ছাত্র বিক্ষোভকে নাগরিক অবাধ্যতা হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের এমন আচরণ রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ভিয়েতনামে মার্কিন যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের স্লোগানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছিলেন, এসব স্লোগান হচ্ছে নতুন সহিংসতা এবং এগুলো অনেক মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও চলমান ছাত্র বিক্ষোভের বিরুদ্ধে একই ধরনের বক্তব্য ব্যবহার করছেন। গত ৫ মে তিনি দাবি করেন, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদ জানানোর অধিকার থাকলেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অধিকার নেই। প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীরা ‘হিংসাত্মক পদ্ধতি’ ব্যবহার করছে বলে তিনি দাবি করেন। যদিও তিনি এর পক্ষে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
জনমত জরিপে রিপাবলিকানরা এগিয়ে থাকবে কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের অভিন্ন অবস্থান ১৯৬৮ সালের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে।
বাইডেন তথা ডেমোক্র্যাটরা দেখাতে চাইছেন তারা রিপাবলিকানদের চেয়েও যেকোনো বিশৃঙ্খলা এবং আন্দোলন-প্রতিবাদের বিরুদ্ধে বেশি কঠোর, কিন্তু ভোটারেরা সব সময় রিপাবলিকানদেরকে বেশি রক্ষণশীল বলে জানে। আর এ কারণে তারা এ ধরণের পরিস্থিতিতে রিপাবলিকানদেরকেই বেছে নিতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ‘আইন-শৃঙ্খলা’ ইস্যুর সঙ্গে জড়িয়ে বাইডেন কেবল রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নয় বরং গভর্নর নির্বাচনেও রিপাবলিকানদের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পথ প্রশস্ত করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ইস্যুতে বাইডেন তথা ডেমোক্র্যাটরা যে পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করেছেন সেটাকে এরিমধ্যে নিজের পক্ষে ব্যবহার করতে শুরু করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেনের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি প্রতিটি ফ্যাকাল্টির প্রধানকে অবিলম্বে আন্দোলন নির্মূল করতে বলছি। মৌলবাদীদের পরাজিত করুন এবং সমস্ত সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উদ্ধার করুন।’
ফিলিস্তিনের সমর্থনে আন্দোলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দমনের প্রক্রিয়াও কঠোর হচ্ছে। এর ফলে ১৯৬০ এর দশকের মতো আমেরিকায় আরেকটি উত্তপ্ত ও দীর্ঘ গ্রীষ্মের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। বাংলা টিভি